পূর্ব মেদিনীপুর: স্ক্রাব টাইফাস আতঙ্কে ভুগছে দুই মেদিনীপুর। চিন্তা বাড়ছে চিকিৎসকদের মধ্যেও। মূলত শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এই রোগ নিয়ে বহু শিশু হাসপাতালেও ভর্তি হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। কোলাঘাটের এক শিশু চিকিৎসকের কাছে এক মাসে প্রায় ২০টি শিশু স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্ত হয়ে এসেছেন জানান শিশু চিকিৎসক প্রবীর ভৌমিক। এই মুহূর্তে কোলাঘাটের একটি বেসরকারি শিশু চিকিৎসা কেন্দ্রে চারজন শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে।
কেন স্ক্রাব টাইফাস হয়?
চিকিৎসক প্রবীর ভৌমিক জানান, স্ক্রাব টাইফাস মূলত পোকার কামড়ে হওয়া একটি রোগ। এই রোগের জন্য দায়ী ‘ট্রম্বিকিউলিড মাইটস’ নামক এক ধরনের পোকা। মূলত ঝোপঝাড়ে এই পোকা থাকে। বাচ্চারা খালি গায়ে এদিক ওদিক খেলাধূলা করে। কোনওভাবে তা কামড়ে দিতে পারে। পাশাপাশি বর্ষায় যেহেতু গাছপালা, ঝোপঝাড়ের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাতেও স্ক্রাব টাইফাসের ঝুঁকি তৈরি হয়। কারণ, এসবের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে নানা ধরনের পোকামাকড়। চিকিৎসকদের কথায়, এই পোকা অনেক সময় পোষ্যের গায়েও থাকতে পারে। গ্রামের দিকে ইঁদুরের উৎপাত খুবই বেশি। বলা বাহুল্য এই ইঁদুরের গায়েও এঁটুলির মতো লেগে থাকে ট্রম্বিকিউলিড মাইটস।
স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ কী?
স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ হল, ধুম জ্বর, মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, পিঠে ও বুকে র্যাশ। শরীরে দুর্বলতা বাড়ে, রক্তচাপ কমতে শুরু করে। অনেক সময় স্ক্রাব টাইফাস কি না তা বুঝতেই সময় লেগে যায় পরিবারের। কারণ, প্রাথমিকভাবে এই পোকা কামড়ালে বিশেষ ব্যথা যন্ত্রণা হয় না। ফলে বাড়িতে জ্বর হলে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই কারণ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। আসলে স্ক্রাব টাইফাস শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর অস্পষ্টতা। টাইফাস একটি গ্রিক শব্দ। যার অর্থ অস্পষ্ট। এই জ্বরের কারণ নিয়েও ধোঁয়াশা বা অস্পষ্টতা থেকে যায়। ফলে পরে পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোরাল হয়ে ওঠে।
হঠাৎই বাচ্চার তেড়ে জ্বর, সঙ্গে খিচুনি
কোলাঘাটের বাসিন্দা মৌমিতা মান্নার কথায়, “হঠাৎই সকালে বাচ্চার জ্বর। ১০১-এর উপরে জ্বর। তারপর ওষুধ খাওয়াই। তারপরও কাঁপুনি দিয়ে খিচুনির মতো হয়। কেমন যেন করছিল বাচ্চাটা। সামনেই এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে দেখাই। উনি বলেন, ভাল করে মাথায় জল দিতে। জ্বর মাথায় উঠে গেছে। বাড়িতে এনে খাবার খাওয়াতেই দেখি যা খাওয়ালাম সবই বমি করে ফেলল। তারপর আবার তেড়ে জ্বর। চোখ উল্টে এমন অবস্থা ছেলের আমরা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিই। তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। তারপর ইনজেকশন দিয়ে ছেলে রক্ত পরীক্ষা হয়। তারপর ধরা পড়ল কী একটা যেন। ইঁদুরের গায়ে একটা ছোট পোকা থাকে সেই পোকা কামড়াতে এমনটা হয়েছে।”
সঠিক চিকিৎসাতেই মিলবে সুস্থতা
আরেক শিশুর মা মুর্শেদা খাতুন বলেন, “আমার বাচ্চার জ্বর নিয়ে এগরার এক ডাক্তারের কাছে যাই। উনি অ্যান্টিবায়োটিক দেন। সঙ্গে ইউরিন, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডও পরীক্ষা করান। কিছুই ধরা পড়েনি। এদিকে জ্বরও কমছে না। উনি হাসপাতালে ভর্তি করার কথাও বলেন। এরপর কোলাঘাটে আসি। ভর্তি নিলেন। পরে উনিই বললেন বাচ্চার স্ক্রাব টাইফাস হয়েছে। দু’দিন চিকিৎসার পর এখন জ্বরটাও কমে গিয়েছে।”