পূর্ব মেদিনীপুর: রাজ্যে পথ দুর্ঘটনা নতুন নয়। কখনও সেই দুর্ঘটনার নেপথ্যে গাড়ির চালক, কখনও বা অনিয়ন্ত্রিত গতি, কখনও বা রাস্তার বেহাল দশা। বিপদের কবলে পড়েছেন কেবল সাধারণ মানুষ। নভেম্বরের শেষ রবিবারের সকালে ফের সেই ছবিটাই যেন সত্যি হয়ে গেল আরও একবার। নবদ্বীপে সৎকারে যাওয়ার পথে গতির বলি প্রায় ১৮। জখম আরও জনা সতেরো শশ্মানযাত্রী। এহেন দুর্ঘটনায় টুইট করে সমবেদনা জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ বার, সেই ঘটনায় টুইট করে সরাসরি রাজ্য সরকারকে নিশানা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। পাশাপাশি, তোলাবাজির অভিযোগও করলেন অধিকারী পুত্র।
নদিয়া দুর্ঘটনায় মোট দুটি টুইট করেছেন শুভেন্দু। একটিতে শোকবার্তা জ্ঞাপন করে তিনি লিখেছেন, “নদিয়ার সড়ক দুর্ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। ওই ১৮ জন মৃতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। পাশাপাশি, আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। যেহেতু রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী নির্বাচনে ব্যস্ত তাই প্রশ্ন ওঠে:”
My heart goes out to the unfortunate victims of the road accident at Nadia where 18 people lost their lives on their way to crematorium. Condolences to the bereaved families & prayers for the speedy recovery of the injured.
As Transport Min is busy with KMC election, question is:— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) November 28, 2021
এরপর আরও একটি টুইটে অধিকারী পুত্র লেখেন, “আর কতগুলি দুর্ঘটনা হলে মুখ্য়মন্ত্রীর বিবেক জাগ্রত হবে! তিনি বুঝতে পারবেন যে, পশ্চিমবঙ্গের ট্রাফিক বিভাগে যোগ্য কর্মীর অভাব রয়েছে এবং প্রশিক্ষণহীন সিভিক পুলিশে ভর্তি, যাঁদের প্রাথমিক কাজ কেবল রাস্তা থেকে গাড়ি গেলে টাকা তোলা।”
How many accidents would awaken the conscience of WB Home Minister & make her realise that the Traffic Dept; especially in the districts are horribly understaffed & managed by untrained Civic Police, who think their primary job is to collect money from the vehicles on road.
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) November 28, 2021
বিজেপি বিধায়কের এই টুইটে কার্যত শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও, রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, জেলা প্রশাসন জানিয়েছে ওই গাড়ির চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিল। সেখান থেকেই এই দুর্ঘটনা।
নদিয়ার এই পথদুর্ঘটনা নিয়ে টুইট করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। এদিন টুইটে তিনি লিখেছেন, “নদিয়ায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একটি ট্রাকের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষে ১৮ জনের মৃত্যু এবং ৫ জন আহত হওয়ার খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বলব, রাজ্য সরকার যেন সবরকমভাবে নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকে। রাজ্যে সড়ক-নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”
সূত্রের খবর,মদন এলাকার বাসিন্দার শিবানী মুহুরী। তার মৃত্যুর পর মৃতদেহ সৎকার করতে একটি গাড়ি প্রায় পঁয়ত্রিশ জনের যাত্রী নিয়ে নবদ্বীপ যাচ্ছিল। সেই সময় হাসখালি থানা ফুলবাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পাথর বোঝাই লরিতে সরাসরি ধাক্কা মারে শববাহী ওই গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজনের। তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। সেখানেও মৃত্যু হয় কয়েকজনের বলে জানা যায়। একাধিক জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে অনুমান চিকিৎসকদের।
এক যাত্রী বলেন, “আমরা উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে নবদ্বীপ যাচ্ছিলাম শবদাহ করতে। রাস্তার পাশে একটি পাথর বোঝাই গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। সেই সময় সামনাসামনি ধাক্কা মেরে গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তিরিশ জনের মধ্যে কুড়িজনের প্রাণ চলে গিয়েছে যতদূর জানি। বাকি দশজন বেঁচে রয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক”
কাঁদো-কাঁদো অবস্থায় আরও এক যাত্রী বলেন, “রাস্তায় কুয়াশা ছিল। খানাখন্দ ভরা ছিল। হয় ড্রাইভার ঘুমিয়ে পড়েছিল নয়ত দেখতে পায়নি। এত জোরে গাড়ি চালাচ্ছিল। নবদ্বীপের সামনে এসে পাশের একটি পাথর বোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে। প্রায় জনা সতেরো-আঠারো মানুষ মারা গিয়েছেন। যার শব নিয়ে ওই গাড়িটি রওনা দিয়েছিলেন তার পরিবারের মোট পাঁচজন মারা গিয়েছে। ওদের সঙ্গে পাঁচ বছরের একটি মেয়েও ছিল। সেও আর রইল না। কয়েকদিন আগেই আমার আত্মীয় বাড়ি ফিরেছিল। সে সিআরপিএফ জওয়ান। ওই গাড়িতে সেও ছিল। এখন আর বেঁচে নেই।”
দুই ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর এক বৃদ্ধ। দিগ-বিদিগ জ্ঞানশূন্য অবস্থা হয়ে গিয়েছে তাঁর। ঠিকভাবে বলতে পারলেন কী হয়েছে। শুধু কাঁদো-কাঁদো গলায় বললেন, “আমার দুই ছেলে। দু’জনেই মারা গিয়েছে।”
রাস্তায় ভরা খানাখন্দ। দোসর অনিয়ন্ত্রিত গতি। এত মানুষের মৃত্যুর দায় কে নেবে? চালকের কি আরও একটু সাবধান হওয়া প্রয়োজন ছিল না? তাহলে কি দুর্ঘটনা এড়ানো যেত না? এমনই নানা প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের তরফে মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতে পারে। তবে, এখনও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেনি রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: BJP MLA: ‘নিখোঁজ’ পদ্ম বিধায়ককে খুঁজতে পুলিশের দ্বারস্থ যুব তৃণমূল!