পূর্ব মেদিনীপুর: কাঁথি শহরে দিনের পর দিন গজিয়ে উঠছে নার্সিংহোম। আদৌ প্রতিটি নার্সিংহোমে কি লাইসেন্সপ্রাপ্ত, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এক নাবালিকার বিয়ের ঘটনার তদন্তে নেমে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এল কেউটে! তেরো বছর বয়সে বিয়ে। আর তারপরই অন্তঃসত্ত্বা। নার্সিংহোমে গিয়ে ভ্রূণ নষ্ট করার অভিযোগ। আর সেই ঘটনার তদন্তে নেমেই লাইসেন্স বিহীন এক নার্সিংহোমের ম্যানেজারকে পাকড়াও করল পুলিশ। কাঁথির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক থেকে নার্সিংহোমের মালিক ও নার্স-অন্যান্যরা পলাতক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩১৩ ও ১২০ (বি) ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অভিয়ুক্ত চিকিৎসক থেকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা।
কাঁথি মহিলা থানার পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্ত নার্সিংহোমের ম্যানেজারের নাম মহম্মদ মেহিদি হোসেন। তাঁর বাড়ি সুতাহাটা থানার এলাকায়। সোমবার ধৃতকে কাঁথি আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক তাঁর জামিন নাকচ করে ৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত, সাম্প্রতিক কয়েক মাস আগে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কাঁথি শহরে ১৩ বছরের এক নাবালিকার বিবাহ হয়। নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। লোকলজ্জার ভয়ে পরিবারের সদস্যরা কাঁথির নার্সিংহোমে ওই নাবালিকার গর্ভপাত করান। তারপরে ওই নাবালিকা বাড়ি চলে যান। বেশ কিছুদিন এই গুরুতর অভিযোগ ধামাচাপা থাকে। চলতি মাসের জুলাই মাসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাসকের কাছে নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ জমা পড়ে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলাশাসক কাঁথি মহিলা থানার পুলিশকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন। পুলিশ তদন্তে নেমে নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়ার অপরাধে তাঁর বাবা ও মাকে গ্রেফতার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩৭৬(২) ধর্ষণ, নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়ার সময় একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে। বর্তমানে তাঁরা জেল হাজতে রয়েছেন।
এই ঘটনায় তদন্তে নেমে নাবালিকার বাবা-মাকে গ্রেফতার পর জিজ্ঞাসাবাদে পর চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। নাবালিকার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল কাঁথির নার্সিংহোমে গর্ভপাত করান। বর্তমানে ওই নাবালিকাও অসুস্থ। কাঁথি মহাকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ঘটনায় তদন্তে নেমে কাঁথির ওই নার্সিংহোমে অভিযান চালান কাঁথি মহিলা থানার পুলিশের তদন্তকারীরা। তারপরেই কাঁথি মহিলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন কাঁথি মহিলা থানার ওসি রুমা মণ্ডল। তদন্তে নেমে নার্সিংহোমের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করা হয়।
কাঁথি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত নার্সিংহোমে ম্যানেজারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি তদন্ত চলছে। তদন্তের কারণে মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি।”
কাঁথি মহকুমা আদালতের আইনজীবী মঞ্জুর রহমান খান বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। মূলত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গর্ভপাত করানো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।”
কাঁথি মহকুমা চিকিৎসক সংগঠনের সম্পাদক অনুতোষ পট্টনায়ক বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। দুপুরে লোকে মুখে শুনলাম। সব নার্সিংহোমে এমটি করার লাইসেন্স নেই। এটা আলাদা ভাবে নিতে হয়। দোষী প্রমাণিত হলে, চিকিৎসকের কড়া শাস্তি হতে পারে।”