খাদিকুল: তাঁদের চোখের সামনে এখনও যেন ভেসে ওঠে সেদিনের ঘটনা। বাজি কারখানায় কাজ করছেন মহিলা ও পুরুষ শ্রমিকরা। আচমকা তীব্র বিস্ফোরণ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল একের পর এক দেহ। চারিদিকে বারুদের গন্ধ। কান্নার রোল। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা ১ ব্লকের সাহাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামে অবৈধ বাজি কারখানায় সেই বিস্ফোরণের পর কেটে গিয়েছে ১৭ মাস। এখনও ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণের চিহ্ন স্পষ্ট। এখন কেমন আছে খাদিকুল? এখনও কি সেখানে বোমা তৈরি হয়? কী বলছে স্বজনহারা পরিবার?
২০২৩ সালের ১৬ মে। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে খাদিকুল গ্রাম। ওই গ্রামে বাজি সম্রাট বলে পরিচিত কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের জেরে অবৈধ বাজি কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আগুন লেগে যায় একটি বাড়িতে। কানফাটানো শব্দ শুনে বেরিয়ে আসেন আশপাশের বাসিন্দারা। কার্যত মুহূতের মধ্যেই ধূলিসাৎ হয়ে যায় ভানু বাগের বাগানবাড়ি ও বাজি কারখানা। এই ঘটনায় প্রথমে বাজি কারখানার ৯ জন পুরুষ ও মহিলা কর্মী মারা যান। পরে কারখানার মালিক ভানু বাগের মৃত্যু হয় ওড়িশার হাসপাতালে।
বিস্ফোরণে মৃত মাধবী বাগের বাড়ি কারখানার উল্টোদিকে। মাধবী বাগ ওই বাজি কারখানায় কাজ করতেন। তাঁর পরিবারের সদস্য উমারানি বাগ বলেন, “মাধবী বাগ আমার জা ছিলেন। আমি তাঁকে সবসময় মিস করি। এখনও সেই আতঙ্ক মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণের সময় আমি বাড়িতে ছিলাম।” এখন এই এলাকায় আর বাজি তৈরি হয় কি না জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, এখন বাজি কারখানা এলাকায় রয়েছে কি না জানেন না। তাঁদের পরিবারের একজন হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন বলে জানান তিনি। এরকম ঘটনা আর যেন না ঘটে, সেই প্রার্থনা করেন।
বিস্ফোরণে মৃত মাধবী বাগের দেওর রণজ বাগ বলেন, “পোড়াবাড়িটা দেখলেই চোখের সামনে সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে। বৌদির দুটির সন্তান। মাকে হারিয়ে অনেক কষ্টে মানুষ হচ্ছে তারা।” এলাকায় তাঁরা আর বাজি কারখানা চান না বলে জানান তাঁরা।
সাহাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা মিলন দে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিহতদের পরিবারগুলিকে সাহায্য করেছেন। এই এলাকায় আর বাজি কারখানা নেই। কেউ করতে চাইলে আমরা বাধা দেব।”
অবৈধ ওই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর শাসকদলের প্রতি ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে পঞ্চায়েত ও লোকসভার ভোট বাক্সে। সাহাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি দখল করেছে। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য অসীম মিশ্র বলেন, “সারা বাংলা বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। শব্দবাজিকে সামনে রেখে যারা অবৈধভাবে বাজি তৈরি করে, অবৈধভাবে বোমা তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা দরকার। অবৈধ বোমা তৈরির কারখানাগুলি বন্ধ করা দরকার। এই ধরনের ঘটনা যাতে না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।”