পূর্ব মেদিনীপুর: কখনও খরা। কখনও অতিবৃষ্টি। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনায় কার্যত ভুগতে হয় কৃষকদের। পর্যাপ্ত রোদ না পেলে যেমন শস্য থেকে শুরু করে সবজির ক্ষতি হয়। তেমনই অতিবৃষ্টিতে আবার পচে যায় সবজি। তাই এবার অতিবৃষ্টি থেকে বাঁচতে নয়া উদ্যোগ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের। বেশি বৃষ্টির হাত থেকে সবজি বাঁচাতে ‘ঝুলন্ত সিড বেড’ তৈরির ভাবনা। আর এর জেরে উপকৃত হবে জেলার সবজি চাষিরা।
প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল ধান ও পান। তবে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এই জেলায় ফুল চাষের পাশাপাশি সবজি চাষও হয়। কিন্তু মূল সমস্যা হল বর্ষাকালে একাধিক জায়গায় জমে থাকে জল। ফলত, জলবন্দি হয়ে পড়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রতিটি ব্লক। ভেসে যায় চাষবাস। তাই এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এবার পূর্ব মেদিনীপুরে ঝুলন্ত সিড বেড তৈরির ভাবনা। অর্থাৎ অতিবর্ষণে চাষ রক্ষায় এবার ভাসমান মডেল নার্সারি গড়ার উদ্যোগ নিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, দু’টি আধুনিক মানের নার্সারি গড়তে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সিএডিসির তৎপরতায় দ্রুত সেই কাজ শুরুও হয়েছে। আর এর পরিচর্যার দায়িত্বে থাকবেন স্বনির্ভর মহিলাদের।
ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশটাই নিচু এলাকা। এর মধ্যে এগরা,ওড়িশার বর্ডার সহ পাঁশকুড়ার কিছু অংশ বাদ দিয়ে বেশির ভাগটাই এঁটেল মাটি হওয়ায় খুব সাধারণ ভাবেই মাটিতে জল ধারণ ক্ষমতা বেশি। ফলে বর্ষাকালে চাষবাসের বিস্তর ক্ষতি হয়। শীতকালেও তার প্রভাব পড়ে সবজি চাষের ক্ষেত্রে। বিস্তীর্ণ অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে নিচু জমিতে দীর্ঘ সময় জল জমে থেকে চাষিদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত এই জলের চাপে ছোট ছোট গাছের নরম শিকড় পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ও কম কিছু নয়।
এই অবস্থায় সঠিক ভাবে চারা উৎপাদনের লক্ষ নিয়ে বিশেষ উপায়ের এই মডেল নার্সারিকেই বেছে নিয়েছেন জেলাপ্রশাসনের আধিকারিকরা। খেজুরির ইড়িঞ্চি এবং চণ্ডিপুরের ভগবানখালি কৃষি খামারে সিএডিসির তত্ত্বাবধানে রাজ্যের আর্থিক সহায়তায় দুটি মডেল নার্সারি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেখানে আম,আপেল কুল,লেবু,পেয়ারা,টিসু কালচার কলা,পেঁপে, আঁতার কলমের চারা উৎপাদনের পাশাপাশি এই মডেল নার্সারি গড়ে তুলে বিভিন্ন রকমের সবজির চারা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
খড়,বাঁশ ও জিআই তারের পরিকাঠামো গড়ে সেটনেট লাগিয়ে আচ্ছাদন তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সমস্ত পরিকাঠামোটাই একেবারে মাটির উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানেই হচ্ছে ‘সিড বেড’ বা বিভিন্ন সবজির চারা তৈরির কাজ।
এ বিষয়ে সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ণ পর্ষদ তমলুক প্রকল্পের আধিকারিক ডক্টর উত্তমকুমার লাহা বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে এমন আধুনিক মানের মোট দুটি মডেল নার্সারি গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে বছরে এক একটিতেই প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষের মত ওলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, লংকা, টমেটো, বেগুন সহ প্রয়োজনীয় গাছের চারা তৈরির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আর সেই চারাগুলি রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রতি পালনের জন্য বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের মহিলাদের কাজে লাগানো হচ্ছে।”