পূর্ব মেদিনীপুর: রাত পোহালেই বড়দিন। কিছুদিন পরেই নতুন বছরের সূচনা। ওমিক্রন উদ্বেগের মধ্যেও তাই বছরের শেষে উৎসবের মেজাজে বাঙালি। ইতিমধ্যেই ভ্রমণপিপাসুরা পাড়ি জমিয়েছেন সমুদ্র সৈকতে (Digha)। সবদিকে খতিয়ে নজর দিতে তাই বিশেষ তৎপর প্রশাসন। দিঘা সমুদ্র সৈকতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। থাকছে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারির ব্যবস্থাও।
বিশেষ ব্যবস্থা দিঘায়
জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সূত্রে খবর, বড় দিনের আগে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সমুদ্রে থাকছে জলপুলিশও। ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোনের বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে দিঘা পুলিশ। প্রতিনিয়ত চলছে মাইকিং। সিসিটিভি ক্যামেরাতে মুড়ে ফেলা হয়েছে সৈকত নগরী।
বড়দিন ও নতুন বছর উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। সেই উপলক্ষ্যে ওল্ড দিঘার সৈকতাবাস সংলগ্ন বিশ্ব বাংলা উদ্যানটিও ঢালাও সাজানো হয়েছে। জোড়া প্রবেশদ্বারের পাশাপাশি রয়েছে নানা আকর্ষণীয় রাইডস।
বসানো হচ্ছে বাতিস্তম্ভ, বসার জায়গা, পার্কের গায়ে পড়ছে রঙের প্রলেপ। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে- বসেই উপভোগ করা যাবে সাগরবেলায় সফেন ঢেউয়ের আনাগোনা। পৃথক পৃথকভাবে সেলফি জ়োন থেকে শুরু করে পিকনিক স্পট চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। শহর পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি জমায়েত এড়াতেই এমন ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
রণংদেহি ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থাকবে রাজা, মন্ত্রী আর হাতি–ঘোড়ার দল। সাজ সাজ রব রণের মাঠ। শতরঞ্জিতে সেজে বসে থাকবে দাবার ঘুঁটি। তাও আবার সমুদ্রের একেবারেই কাছে, খোলা আকাশের নীচে! ওল্ড দিঘার সৈকতাবাস সংলগ্ন প্রথম বিশ্ব বাংলা উদ্যানের নকশার একটি দৃশ্য।
জোর পর্যটনে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণির উপকূলীয় অঞ্চল। রাস্তাঘাট, সৈকতের সৌন্দার্যায়নের কাজ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ইয়াসের সেই ক্ষত সংস্কার-সহ সৈকত নগরীকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার কাজ করেছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ।
বড়দিনের আগেই নতুন সাজের দিঘা দেখা যাবে বলে আশা উন্নয়ন পর্ষদের কর্তাদের। নিউ দিঘার হেলিপ্যাড ময়দান এবার পিকনিকের জন্য নির্ধারণ করেছে প্রশাসন। আগের মতন যত্র তত্র বসে পিকনিক করা যাবে না বলে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক মুক্ত দিঘা ঘোষণা করা হয়েছে আগেই।
সাজসজ্জার কাজ পুরোপুরি শেষ। প্রশাসনিক আধিকারিকরা নিশ্চিত, দিঘার অপরূপ দৃশ্যে মুগ্ধ হবেন পর্যটকরা। উন্নয়ন পর্ষদের চেষ্টায় দিঘা রাজ্যের মানুষের কাছে হোক ফার্স্ট ডেস্টিনেশন, এমনটাই চাইছেন তাঁরা। এই সৈকতকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রূপে পর্যকদের কাছে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন তাঁরা। দার্জিলিং নয় দিঘাই বাঙালির প্রথম পছন্দ হবে, দাবি পর্ষদের কর্তাদের।
করোনা-কাঁটায় বারবার জেরবার হয়েছে দিঘার পর্যটন ব্যবসা। বেড়াতে গেলে নিতে হবে করোনা প্রতিষেধকের দুটি টিকা অথবা হতে হবে করোনা নেগেটিভ। এই সংক্রান্ত শংসাপত্র না দেখালে সৈকতের হোটেলে মিলবে না ঘর এমনই নির্দেশিকা জারি করে সরকার। এরপরেই সৈকতে কমতে শুরু করে ভিড়। ফলে মাথায় হাত পড়ে যায় হোটেল ব্যবসায়ীদের।
তাঁরা অভিযোগ করেন, পর্যটক না থাকায় হোটেলের ইলেকট্রিক বিল ও কর্মচারীদের বেতন দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আয় নেই, অথচ ব্যয়ের খাতায় চলে যাচ্ছে সব। এমনকি পুরোপুরি হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। অবশেষে বিপত্তি কাটিয়ে সুগম হতে চলেছে ব্যবসা। মুখে হাসি ফুটেছে হোটেল মালিকদেরও।
এক হোটেল মালিক বললেন, “১৫ দিন আগে থেকেই হোটেলগুলির রুম বুক হতে শুরু করেছে। গত দুবছরে তেমনটা ভিড় ছিল না দিঘায়। আবার এই বড়দিনে সেটা দেখা যাচ্ছে। ব্যবসা ভাল হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।”