পূর্ব মেদিনীপুর: ঘূর্ণিঝড় অশনি নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। পর্যটকদের জন্য জারি হয়েছে সতর্কতা। ১০ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সৈকতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তো রয়েছেই। রবিবার থেকেই দেখা গিয়েছে সমুদ্রস্নানে লাগাম পরানোর প্রক্রিয়া শুরু। এদিন দিঘার ব্লু ভিউ ঘাটে বেশ কয়েকজন পর্যটক সমুদ্রের গভীরে যাওয়ার জন্য এগোচ্ছিলেন। দেখতে পেয়েই ছুটে যান কর্তব্যরত নুলিয়ারা। পাড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান তাঁদের। আগামী কয়েকদিন পর্যটকদের গতিবিধিতে বিশেষ নজরদারি চালাবে সৈকত পুলিশ। থাকবে জেলা পুলিশের টহলদারি ভ্যান। বছর বছর ঘূর্ণিঝড় যেন পিছু ছাড়ছে না উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির। আমফান, ইয়াসের পর এবার ঘূর্ণিঝড় অশনি। ঝড়ের গতিবেগ যাই থাকুক না কেন দিঘা, চাঁদপুর, জলধা, শঙ্করপুর, তাজপুরে কম বেশি ক্ষতি হয়ই। একদিকে উপকূলে হাওয়ার দাপট, অন্যদিকে প্রবল জলোচ্ছ্বাস বারবার বাঁধ ভাঙে, ভাঙে দোকানপাট, ভাসায় বাড়ি।
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস মিলতেই এইসব এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার সমুদ্র বাঁধ একেবারে নড়বড়ে হয়ে রয়েছে বলেই দাবি স্থানীয়দের। যে কোনও মুহূর্তে সমুদ্র ফুলে ফেঁপে উঠলে, জল প্রবেশ করতে পারে গ্রামের মধ্যে। তাই ইয়াসের মতো ফের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই রামনগর-১ ব্লকের তরফ থেকে এই সমস্ত ক্ষতি আটকানোর জন্য বেশ কয়েকটি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ঝড়ের অবস্থান বুঝে এলাকার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও সেরে রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত জল, ওষুধ এবং শুকনো খাবার মজুত করেছে জেলা প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দিঘা সমুদ্র সৈকত এক প্রকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ফের দিঘাকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আর সেই কাজ শেষ হতে না হতেই নতুন ঘূর্ণিঝড়ের ‘অশনি’ সঙ্কেত। দিঘা সমুদ্র সৈকত জুড়ে এখন তৎপরতা তুঙ্গে। ইতিমধ্যে কুইক রেসপন্স টিম সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে টহল শুরু করেছে। মানুষকে নিরাপদ রাখতে দফায় দফায় বৈঠক করছে ব্লক প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমস্ত বিডিওর সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় বৈঠক করেছেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি। রবিবার তিনি সাংবাদিকদের জানান,”আমরা প্রত্যেকটি দফতরকে ইতিমধ্যে সর্তক করেছি। প্রত্যেক বিডিও ও মহকুমাশাসক এলাকায় এলাকায় পরিদর্শনে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও যদি কোনও এলাকায় গাছ পড়ে যায়, সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রত্যেক ব্লকের জন্য কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করে রেখেছি। আমরা সমস্ত প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছি।”
সোমবারের মধ্যে শক্তি বাড়িয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড় হবে অশনি। ১০ মে বিকেলে অন্ধ্র ওড়িশা উপকূলের কাছে পৌঁছবে। এরপর বাঁক নিতে পারে দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলের দিকে। সেখান থেকে এগোতে পারে বাংলাদেশের দিকে। এর প্রভাবে বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে বাংলার তিন জেলা পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।