দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও জলপাইগুড়ি: বজ্রপাতে বঙ্গে মৃত্যু অব্যাহত। ফের দুই জেলায় বাজ পড়ে মৃত্যু ও আহত হলেন মোট ৮ জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বজ্রপাতের জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতুলিতে মৃত্য়ু হয় ২জনের। গুরুতর জখম হন ১ জন। অন্যদিকে, জলপাইগুড়ির মালবাজারে আচমকা বাজ পড়ে (Thunderstorm) জখম হন ৫জন মহিলা শ্রমিক।
বৃহস্পতিবার, কুলতুলিতে দুপুরবেলা আচমকা বজ্রবিদ্য়ুত্-সহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সেইসময় বাড়ি ফিরছিলেন স্থানীয় তিন বাসিন্দা। ঘন ঘন বাজ পড়তে শুরু করলে তিনজনেই একটি গাছের নীচে আশ্রয় নেন। সেই গাছের উপরে বাজ (Thunderstorm) পড়তেই ঘটনাস্থলে অচৈতন্য হয়ে পড়ে যান তাঁরা। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ছুটে এসে তিনজনকেই উদ্ধার করে জামতাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিত্সকেরা বিউটি মণ্ডল ও অরবিন্দ হালদারকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অরবিন্দের ভাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিত্সাধীন। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আসেন কুলতুলির তৃণমূল বিধায়ক গণেশ মণ্ডল।
বিধায়ক গণেশ মণ্ডল বলেন, “যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আগেই বলেছিলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে মৃত্য়ু হলে মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। পাশাপাশি, আহতদেরও সাহায্য় করা হবে। আমরা সেই মতো ওই দুই মৃতের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেব।”
অন্যদিকে, বুধবার বজ্রপাতের (Thunderstorm) জেরে ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের ইংগু চাবাগানে কর্মরত ৫ মহিলা শ্রমিক গুরুতর আহত হন। সূত্রের খবর, সেদিন আকাশ পরিষ্কার থাকলেও দুপুর থেকে মেঘ জমতে শুরু করে। আচমকাই প্রচণ্ড শব্দ করে বাজ পড়ে। সেই বাজের আঘাতেই গুরুতর জখম হন কল্পনা লেপচা, সঙ্গীতা ছেত্রী, সন্তু লেপচা, কবিতা রাউতিয়া, ও লীলাবতী ওরাও। দ্রুত তাঁদের চা বাগান থেকে উদ্ধার করে মঙ্গলবাড়ি হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর লীলাবতী ওরাওকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ৪ জনের অবস্থা গুরুতর থাকায় তাঁদের মাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আপাতত, সেখানেই চিকিত্সাধীন সকলে।
বঙ্গে বজ্রবিপদের জেরে ক্রমেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই নিয়ে বঙ্গে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা চল্লিশ পার করল। আহতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সমীক্ষা বলছে, ২০১৯-২০২০-র মধ্যে একবছরের ব্যবধানে বাংলায় বাজের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৯৯ শতাংশ। মৌসম ভবন (IMD) সূত্রে খবর, সোমবার কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের মধ্যে প্রায় ৬১ হাজার বাজের উৎপত্তি হয়েছে। তারমধ্যে প্রায় ৩৮ হাজার বাজ নেমে এসেছে মাটিতে। বাকিগুলি মিলিয়ে গিয়েছে আকাশেই। বজ্রবিপদ থেকে বাঁচতে গাছ লাগানোর পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবেশবিদদের মতে, বিশ্বউষ্ণায়ন ও মাত্রাতিরিক্ত দূষণ এই বজ্রপাতের কারণ। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর কারণ বলে মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি, মানুষের অসাবধানতা মৃত্যু হওয়ার একটা বড় কারণ। জেলায় জেলায় যেখানে বারবার প্রশাসনের তরফে সতর্ক করা হচ্ছে সেখানে আমজনতার ‘গা-ছাড়া’ মনোভাবই মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আরও পড়ুন: ‘গাছের খাবেন তলারও কুড়োবেন’! অনৈতিকভাবে অর্থ ‘আদায়’, শোকজ নোটিস পেলেন তৃণমূল পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ