দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সংসারে আর্থিক অনটন থাকায় স্বামীর একরকম নির্দেশেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিচারিকার কাজ বেছে নিয়েছিলেন স্ত্রী। চেয়েছিলেন স্বামীর পাশে দাঁড়াতে। সংসারের হাল তো ফিরবে। বাড়ি বাড়ি কাজ করে ঘরে ফিরতে একটু রাতই হয়। আর সেই কারণের স্ত্রীয়ের ওপর পাশবিক অত্যাচারের অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। প্রথমে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে মারধর, তার পর বাড়িতে আটকে রেখে জলটুকুও খেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এদিকে খবর পেয়ে মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে এসেছিলেন বৃদ্ধ বাবা। জামাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেলেন না তিনিও! চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুর থানার উত্তরভাগ দক্ষিণ পাড়ায়।
জানা গিয়েছে, স্ত্রীর উপর সন্দেহে নিত্যদিন তাঁর ওপর অত্যাচার করতেন স্বামী আশিস প্রামাণিক। স্ত্রী অন্য কোনও সম্পর্কে জড়িয়েছেন, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে রোজ চলত নির্যাতন। সেই অত্যাচার চরম আকার নিল বৃহস্পতিবার রাতে। বেধড়ক মারধোর করে স্ত্রীকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। স্ত্রীয়ের বাপের বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করতে এলে তাঁদের দিকেও তেড়ে গেলেন জামাই!
মথুরাপুরের অসীমা হালদারের সাথে বারুইপুর উত্তর ভাগের দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা আশিস প্রামাণিকের সঙ্গে প্রায় বছর ১৫ আগে দেখাশোনা করে বিয়ে হয়। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। তাঁদের একটি ১৪ বছরের কন্যা সন্তানও আছে। পেশায় কলের মিস্ত্রির কাজ করেন আশিস। কিন্তু করোনা আর লকডাউনে বেশ কিছুদিন হল আর্থিক অনটন দেখা দিয়েছে পরিবারে। তাই তাঁর নির্দেশে স্ত্রী পরিচারিকার কাজ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও অশান্তি। কাজ শেষে বাড়িতে ফিরতে দেরি হলে কিংবা কোনও পুরুষের সঙ্গে কথা বললেই স্ত্রীর ওপর সন্দেহ করতেন আশিস। অসীমা কাজের সুবিধার জন্য একটা মোবাইল ফোন কিনেছিলেন। তা নিয়ে সন্দেহ আরও গাঢ় হয় আশিসের। প্রায়শই এ নিয়ে বাড়িতে ঝগড়া, অশান্তি চলত। বরের হাতে মারধোর খাওয়া যেন রুটিন অসীমার।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতের নৃশংসতা যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল। অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে শাবল, চেলাকাঠ দিয়ে নির্মমভাবে মারধোর করেন আশিস। হাতুড়ি দিয়েও বউকে মারেন! তারপর বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি তুলে দেন আশিস। তেষ্টায় ছাতি ফেটে গেলেও একটু জল মিলল না। এদিকে প্রতিবেশীদের মারফত সেই অত্যাচারের খবর পেয়ে মথুরাপুরের বাপের বাড়ি থেকে অসীমার বাবা মহাদেব হালদার ও ভাই মোহন ছুটে আসেন। শুক্রবার সকালে অটো করে বোনের শ্বশুর বাড়িতে এসে মোহন দেখেন তখনও বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিদিকে আটকে রেখেছে!
তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করতে যান বাবা ও ভাই। অভিযোগ, ছুটে আসে জামাই আশিস প্রামাণিক। হুমকি, মারধর দিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পর তাঁরা ছুটে যান থানায়। অবশেষে মেয়েকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বারুইপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন মহাদেব। জামাইয়ের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বারুইপুর থানার পুলিশ। আরও পড়ুন: ভিড়ে আটকে মেজাজ হারালেন তৃণমূল নেতা, পরের কাণ্ডে সবার গলা শুকিয়ে কাঠ!