সুন্দরবন: কোভিড ভ্যাকসিন (Covid Vaccine) তৈরির জন্য নোভেল করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেনের জেনেরিক গঠন ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হারের পার্থক্য নিয়ে তাঁর গবেষণা বিশ্বের তাবড় গবেষকদের প্রশংসা আদায় করেছে। সেই গবেষণার স্বীকৃতি হিসাবে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হচ্ছেন সুন্দরবনের এক ভূমিপুত্র। নাম শুভাশিস নাটুয়া।
আগামী সেপ্টেম্বর মাসের ১০ এবং ১১ তারিখ কেরলের কোয়েম্বাটুরে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড অন ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিনের স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠানে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলার ছেলে শুভাশিস নাটুয়াকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে। বাড়ির ছেলের এই স্বীকৃতি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি পরিবার ও শুভাশিসের স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা।
মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুরের বাসিন্দা শুভাশিস নাটুয়া। বাবা ব্রজেন্দ্রনাথ নাটুয়া পেশায় কৃষক। বাবার রোজগার ছাড়া কয়েক বিঘা জমিই পরিবারের একমাত্র ভরসা। ব্রজেন্দ্রনাথবাবুর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে শুভাশিসবাবু সবচেয়ে ছোট। স্কুলে পড়ার সময় থেকে বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করতেন তিনি। তবে পড়াশোনাতে বরাবরই তিনি চৌখস। ছোট থেকে পড়াশোনায় মেধাবী শুভাশিসের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু ২০১৩ সালে কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর পরিবারের আর্থিক অনটন তাঁর চিকিৎসক হওয়া হয়নি।
তখনই কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি তাঁর প্রিয় ছাত্রের পড়াশোনো চালিয়ে যেতে সমস্তরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। পরে স্কুলের তরফ থেকে বৃত্তিরও ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৫ সালে জয়নগরের মজিলপুর জেএম ট্রেনিং স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে ভর্তি হন শুভাশিস। তারপর একের পর এক ধাপ পেরিয়ে সামনে এগিয়ে চলা শুরু। পরবর্তীতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও গবেষণার সুযোগ পান শুভাশিস।
আর এখন আমেরিকার ইলিনয় ইউনির্ভাসিটিতে ক্যান্সারের কোষ নিয়ে গবেষণা করছেন বছর পঁচিশের এই তরুণ। ক্যান্সারের উপর তাঁর গবেষনার রিপোর্ট নেচার এবং অক্সফোর্ড ইউনির্ভাসিটির জার্নালে প্রকাশ হওয়ায় প্রশংসিত হন শুভাশিস। করোনা অতিমারির জেরে যখন গোটা বিশ্ব কাঁপছে, ঠিক সেই সময় নোভেল করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেনের জেনেরিক গঠন ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হারের পার্থক্য নিয়ে তাঁর গবেষণার জন্য ভোপালের আইসার-এ সুযোগ পান শুভাশিস। মোট ১৫ জন বিজ্ঞানীর দলে একজন আরএনএ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কোভিড ভ্যাকসিন এবং ডায়াগনস্টিক ডেভেলপমেন্টের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাংলার এই তরুন গবেষক।
তারই পুরস্কার পেতে চলেছেন সুন্দরবনের ভূমিপুত্র শুভাশিস। ফোনে তিনি জানান, পরিবার ও পারিপার্শ্বিক চাপে অনেক প্রতিভাধর ছেলেমেয়ে আজকাল গবেষণার দিকে পা বাড়াতে চান না। তাঁরা বেছে নেন ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষকদের প্রয়োজন কী সে ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। তাই আগামিতে তরুণরা গবেষণার কাজে এগিয়ে আসুন এটাই তাঁর ইচ্ছা। আর নিজের স্বীকৃতি নিয়ে শুভাশিস অল্প কথায় প্রতিক্রিয়া, তিনি খুশি। ছেলের সাফল্যে খুশি তাঁরল পরিবারও। চোখের সামনে বড় হতে দেখা মফস্বলের ছাত্রকে নিয়ে গর্বিত স্কুলের শিক্ষক চন্দনবাববুও। আরও পড়ুন: আশির ওপর বয়স, বাড়িতে একাই থাকতেন, বৃদ্ধের বাড়িতে রোজ ঢুকতেন তিন মহিলা! ওঁত পেতে প্রতিবেশীরা দেখলেন আসল দৃশ্য