রায়দিঘি: ফের সমবায়ের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ। এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে। সেখানে খাঁড়ি ইউনিয়ন লার্জসাইজ প্রাইমারি এগ্রিকালচারাল কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডে এক কোটি টাকারও বেশি অঙ্কের আর্থিক তছরূপের অভিযোগ উঠে আসছে। ৬৬ বছরের পুরনো এই সমবায়। পথ চলা শুরু হয়েছিল কৃষি সমবায় দিয়ে। বর্তমানে এই সমবায়ের চারটি শাখা রয়েছে। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এই কৃষি সমবায়টি। এই সমবায়ের কাশীনগর শাখায় মোটা টাকার নয়ছয়ের অভিযোগ উঠে আসছে। যার জেরে আশঙ্কার মধ্যে পড়ে গিয়েছেন সমবায়ের প্রায় ২ হাজারেরও বেশি আমানতকারী। আর্থিক তছরূপের অভিযোগে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে জেলা সমবায় দফতর।
এই সমবায় ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিবু গোস্বামী। তিনি সমবায়ের প্রাক্তন সম্পাদকও বটে। শিবু গোস্বামীর অভিযোগ, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের অডিট রিপোর্টে আর্থিক তছরূপ ধরা পড়েছে। অভিযোগের তির কাশীনগর শাখার তৎকালীন ইনচার্জ মোহনলাল হালদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করা হচ্ছে, তিনি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১ কোটি ১১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৫৬ টাকা তছরূপ করেছেন। তিনি এবার তৃণমূল প্রাক্তন বুথ সভাপতিও। এই আর্থিক নয়ছয়ের ঘটনার সঙ্গে সমবায়ের অনেক কর্মীই জড়িত বলে অভিযোগ।
এই অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে দেখা গেল অভিযুক্ত মোহনলাল হালদার বিগত প্রায় দু’মাস ধরে বাড়ি ছাড়া। তবে যোগাযোগ করা হয়েছিল মোহনলালের মা বন্দনা হালদারের সঙ্গে। তিনিও জানাচ্ছেন, তাঁর ছেলে বাড়িতে নেই প্রায় দু’মাস হল। কোথায় গিয়েছেন তাও বলে যাননি বলেও দাবি মোহনলালের মায়ের। তাঁর অনুমান, হয়ত এই টাকা-পয়সা জনিত কারণেই মোহনলাল বাড়িতে নেই। বললেন, “ও কিন্তু অত টাকা নেয়নি। ও কি একাই নিয়েছে? আর কেউ নেয়নি?”
রায়দিঘির এই সমবায়ে গত দু’বছর ধরে কোনও নির্বাচন হয়নি। বর্তমানে কাশীনগর শাখায় কোনও ইনচার্জ নেই। সমবায়ের গোটা কাজ দেখভাল করেন ম্যানেজার শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল। তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে তিনি অফিসে ছিলেন না। একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস মারফত জানিয়েছেন, তিনি ফোনে এই বিষয়ে কোনও কথা বলবেন না।
সমবায়ের ম্যানেজার শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডলের দেখা না পাওয়ায় যোগাযোগ করা হয়েছিল সেখানকার ক্যাশিয়ার মোহনচন্দ্র কয়াল। তিনি অবশ্য বলছেন, অভিযোগের বিষয়টি ব্যাঙ্কের নজরে এসেছে। গড়মিলের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করতেই জোর গলায় বললেন, হ্যাঁ হয়েছে। দফতরের থেকে তদন্ত শুরুও হয়ে গিয়েছে। বললেন, “মোহনলাল শাখার ইনচার্জ থাককালীনই সব হয়েছে। এই টাকা জনগণের টাকা, আমানতকারীর টাকা।”
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল স্থানীয় বিধায়ক অলোক জলদাতার সঙ্গেও। বললেন, “সমবায়ে প্রত্যেক বছর অডিট হয়। সেখানে যদি নয়ছয় ধরা পড়ে থাকে, তাহলে যে দোষী তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। ওই টাকা জনগণের টাকা। অভিযুক্ত যে দলই করুক না কেন, কেউ সমর্থন করবে না। দুর্ভাগ্যবশত ওই ব্যক্তি আগে কাশীনগরের ব্লক সভাপতি ছিল। ওই ব্যক্তি সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মচারীও ছিল। ব্যাঙ্কের কর্মচারী থাকার সুবাদেই মনে হয়, এই দুর্নীতি করেছে।”
এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই সমবায় ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় বিডিও ও আইসির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন সমবায়ের গ্রাহকরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সমবায়ের রেজিস্ট্রারের তরফে তদন্তও শুরু করা হয়েছে।
সমবায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বর্ষীয়ান বাম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। বলছেন, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও এফআইআর করেনি। এখন শুনছি, অভিযুক্ত পলাতক। প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ কোনও সক্রিয় ব্যবস্থা এখনও গ্রহণ করেনি।”