দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বারেবারে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠী কোন্দলে’র জেরে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে বাসন্তীর নাম। বোমা-গুলির লড়াইয়ে বারে বারে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাসন্তী। প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক। নেপথ্যে উঠে এসেছে তৃণমূলেরই গোষ্ঠীকোন্দলের তত্ত্বই। বাড়ি ঘর ভাঙচুর, লুঠপাট, এমনকি আগুন লাগানোর মতো অভিযোগও উঠেছে। কোন্দল থামাতে এবার বিশেষ পদক্ষেপ তৃণমূলের। আয়োজন করা হচ্ছে বিশেষ রক্তদান শিবির। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের কথায়, সেই মঞ্চেই মিলবে বিবাদমান দু’পক্ষ। বুধবারই বারুইপুর ব্লকের ফুলতলায় বারুইপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। নেতৃত্ব দেন সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার। তাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দলীয় কোন্দলের বিষয়টি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন বিধায়ক। যোগরঞ্জন হালদার বলেন, “আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এটা। আমাদের নিজেদের মনে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা সবাই মিলে বসে সেটা মিটিয়ে ফেলতে চাই। সবাই মিলে বসে দলীয় ভাবে বিষয়টা মিটিয়ে নিতে চাইছি।”
তপ্ত বাসন্তীকে শান্ত করতে এর আগেও একাধিক পদক্ষেপ করেছেন রাজ্য নেতৃত্ব। জেলা, রাজ্য নেতৃত্ব, এমনকি দলনেত্রীও একাধিকবার দুই সংগঠনকে প্রকাশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তবুও থামেনি সংঘর্ষের মতো ঘটনাl যা রীতিমতো মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে প্রশাসনেরJ
দিন কয়েক আগে বাসন্তী বিধানসভা কেন্দ্রের ভরতগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও বোমাবাজি, মারধর ও ইট ছোড়াছুড়ি করেছিলেন দলেরই দুই পক্ষের কর্মী সমর্থকরাl নেতৃত্বের একাংশই বলছেন, এই সব ঝামেলা উন্নয়নের কাজই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকায়। আর সেই গোষ্ঠীকোন্দল থামাতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলাকে ভেঙে সাংগঠনিকভাবে নতুন করে গড়ে তোলা হল সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলা।
বিধায়কের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন সাংগঠনিক যুব তৃনমূলের সভাপতি বাপি হালদার, রাজ্য সম্পাদক শওকত মোল্লা, যিনি ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক। সেই সঙ্গে ছিলেন গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মন্ডল, ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশ রাম দাস, মগরাহাট পূর্বের বিধায়ক নমিতা সাহা, বারুইপুর পূর্বের বিধায়ক বিভাস সরদার ও মন্দিরবাজার বিধানসভার বিধায়ক জয়দেব হালদার।
বৈঠক প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক সওকত মোল্লা বলেন, “আমরা খুব খুশি, যে সবাইকে এক জায়গায় আনতে পেরেছি। সবাই এক সঙ্গে চলার শপথ নিয়েছে। আগামী দিনে যুব মাদার বলে আর কিছু থাকবে না এখানে। আগামী দিনে একটা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছি। ২৩ তারিখ হবে। সেই রক্তদান শিবিরে, যাদের মধ্যে বিবাদ রয়েছে, তারাও উপস্থিত থাকবে সকলে। সবাই মিলে যাবে একসঙ্গে।”
প্রসঙ্গত, দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত যুব তৃনমূলের ব্লক সভাপতি আমানুল্লা লস্কর ও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আব্দুল মান্নান গাজির মধ্যেই রয়েছে ক্ষমতা দখলের লড়াই l বছরভর দুই গোষ্ঠী বারবার গোলাগুলি. বোমাবাজির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেl দুই বিবাদমান গোষ্ঠীর কোন্দল থামাতেই এই বৈঠক তৃণমূল নেতৃত্বের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এদিনের বৈঠক থেকে দলের নেতাদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৩ ডিসেম্বর বাসন্তীতে দলের তরফে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছেl সেখানেই দুই পক্ষের সমর্থকরাই উপস্থিত থাকবেন। দুপক্ষের রিইউনিয়নের জন্যই নেতৃত্বের এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুপক্ষেরই কয়েকশো কর্মী সমর্থক।
আরও পড়ুন: Jalpaiguri News: নদীর ধারে পায়ের ছাপ দেখেই আতঙ্ক ছড়ায়, এবার ধূপগুড়িতে ভালুক-আতঙ্ক