দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ক্যানিংয়ের ফুটপাত পড়ে থাকা অসুস্থ মহিলাকে প্রাণে বাঁচালেন অটো চালকেরা। নিজেদের উদ্যোগে হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করলেন তাঁরা। অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় ৩০ মিনিট অচৈতন্য হয়ে এক মহিলা পড়ে ছিলেন রাস্তার ফুটপাথে। সাধারণ পথচারীরা উঁকি মেরে যে যার গন্তব্যে চলে যাচ্ছিলেন।বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। হল না কয়েকজন অটো ড্রাইভারের সৌজন্য। তাঁদের মানবিকতায় প্রাণ বাঁচল অসুস্থ মহিলার।
অটো চালক’রা অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকা ওই মহিলাকে চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হওয়ার পথে ওই মহিলা। স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, ক্যানিং থানার অন্তর্গত ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর রেদোখালি গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা সর্দার। তাঁর বাপের বাড়ি ক্যানিংয়ের গোপালপুর পঞ্চায়েতের বদুকুলা গ্রামে। বছর সতেরো আগে বিয়ে হয়েছিল। দু’টি পুত্র সন্তান রয়েছে। তবে প্রায় পাঁচ বছর আগে মহিলার স্বামী সুদর্শনবাবুর মৃত্যু হয়। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী মৃত্যুতে সংসারের হাল ধরেন প্রতিমা সরদার। তিনি কলকাতার ঢাকুরিয়াতে পরিচারিকার কাজ করেন।
প্রতিদিনই প্রায় ১৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ক্যানিংয়ে আসতেন। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে ঢাকুরিয়ায় কাজের বাড়িতে যেতেন। অন্যান্য দিনের মতো বুধবার সকালে কলকাতায় গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ছটা নাগাদ ক্যানিংয়ে ফিরে সাইকেল চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পথেই ক্যানিং-বারুইপুর অটো স্ট্যান্ডে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাইকেল থেকে নেমে রাস্তার ফুটপাথে পড়ে গিয়ে অচৈতন্য হয়ে যান তিনি। স্থানীয় পথচারীরা উঁকি দিয়ে দেখেও যে যাঁর গন্তব্যে রওনা দেন।
এইভাবে প্রায় ত্রিশ মিনিট এমন অসহায় ভাবে পড়ে থাকেন প্রতিমা। কেউই সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। অগত্যা লোকের ভিড় দেখে এগিয়ে আসেন অটোচালক দুলাল চন্দ্র সাউ। তাঁর সঙ্গে অন্যান্য অটোচালক। তাঁরাই প্রতিমা কে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জ্ঞান ফিরতেই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রতিমা সরদার জানান, ‘কলকাতা থেকে কাজ সেরে ক্যানিংয়ে ফিরেছিলাম। ক্যানিং থেকে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দিই। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। ক্যানিং অটো স্ট্যান্ডে পড়ে গিয়েছিলাম। তার পর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরতেই জানতে পারি ক্যানিংয়ের অটোচালক দাদারা আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। দাদারা পাশে না দাঁড়ালে আমি হয়ত মারা যেতাম। অনাথ হয়ে পড়ত আমার দুই নাবালক সন্তান।অটোচালক দাদাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি সুস্থ হয়ে গেলে দাদাদের খোঁজ নেব। আমার পাশে এভাবে দাঁড়ানোর জন্য তাঁদের ডেকে ভাইফোঁটা দেব”।