দক্ষিণ ২৪ পরগনা: বাড়ির সামনেই রাস্তায় চেয়ারে বসেছিলেন তৃণমূল নেতা। সেই সময় গুলি করে তাঁকে ‘খুন’ করে দুষ্কৃতীরা। তৃণমূল নেতার সেই খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়েছিল ক্যানিং। রীতিমত বিক্ষোভে নেমেছিল এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন বলে খবর। সেই ঘটনার পর থেকে জোর কদমে চলছিল পুলিশের তল্লাশি অভিযান। খুনের ঘটনায় এ বার আরও দুই অভিযুক্তকে মহারাষ্ট্র থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মহারাষ্ট্র থেকে মনিরুল ও সাকাত আলি শেখ নামে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর খুনের ঘটনার দিন ওই দুই দুষ্কৃতীর ছবি ধরা পড়েছিল সিসিটিভি ফুটেজে। কিন্তু খুনের পরেই পালিয়ে যায় ওই দুই দুষ্কৃতী। এ রাজ্য ছেড়ে একেবারে মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে গিয়ে লুকিয়েছিল তারা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। বুধবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে ওই দুই ধৃতকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। আপাতত তাদের ক্যানিং থানাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়।
গত ২০ নভেম্বর শনিবারের রাতে, নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলেখালি গ্রামে, নিজের বাড়ির কাছেই আচমকা গুলিবিদ্ধ হন ক্যানিংয়ের নিকারীঘাটা অঞ্চল যুব তৃণমূল সভাপতি মহরম শেখ। ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেছে যাদের দেখা গিয়েছিল, এলাকার সেই মূল নেতা ও তার সঙ্গীদের এখনো ধরা যায়নি এখনও। জানা গিয়েছে, স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান পাঁচু সাফুই ছাড়াও মলয় মণ্ডল,সাইফুল লস্কর মোট এই তিন জন দলীয় কর্মীকে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও, থানার সামনে দাঁড়িয়ে ধৃত ওই নেতার বাবা দাবি করেন, যে তার ছেলে ঘটনার দিন একটি মেলা দেখতে গিয়েছিল। সে খুনের ঘটনায় জড়িত নয়।
প্রসঙ্গত, ওই শনিবারের রাতে বাড়ির সামনে আততায়ীদের গুলিতে গুরুতর জখম হন যুব তৃণমূল নেতা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই তৃণমূল নেতাকে ভর্তি করা হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। জানা যায়, ক্যানিং থানার নিকারীঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার যুব তৃণমূল সভাপতি মহরম শেখ ওইদিন সন্ধ্যার সময় বাড়ির সামনে একটি চেয়ারে বসেছিলেন। একটি অটো করে এসে দুষ্কৃতীরা এসে তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি চালায়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই অকুস্থল থেকে চম্পট দেয় তারা। গুলির শব্দে চমকে ওঠে স্থানীয়রা। তাঁরা ছুটে এলে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন তৃণমূল নেতা।
কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তার বিবরণী দিতে গিয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “মহরম হেঁটে এসে আমাদের ওই চেয়ারে বসেছিল। ওরা চারজন অটো নিয়ে এসেছিল। মিয়ারুল, হাফিজুল আর রফিক। আরেকজনকে ঠিক চিনতে পারিনি। এসে গুলিটা করল। তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ে এখান থেকে ছুটে চলে গেল।” ওই প্রত্যক্ষদর্শীর সংযোজন, “গাড়িটা এমন অবস্থায় গেল সামনে থাকলে চাপা দিয়ে দিত।” তিনি একে ‘পার্টিগত বিষয়’ বলে দাবি করলেও, আততায়ীরা কোন দল করে সেটা বলতে পারবেন না বলে জানান।
তড়িঘড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতাকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। রাত ২টো নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর।