দক্ষিণ ২৪ পরগনা: নির্দিষ্ট সময়ে ফর্ম ফিলাপ করেছিল। তবুও সময়ে আসেনি অ্যাডমিট কার্ড। জীবনের প্রথম পরীক্ষায় বসতে পারবে না সে, নষ্ট হতে পারে একটা বছর…কেবল আশঙ্কা করেই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ডায়মন্ড হারবারের ১ নম্বর ব্লকের বাসুলডাঙা এলাকায়। যদিও পরিবারের সদস্যরা ছাত্রীটিকে উদ্ধার করতে পেরেছেন। এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বাসুলডাঙার বাসিন্দা মির্জানা খাতুন ডায়মন্ড হারবার গার্লস হাইস্কুলের পড়ুয়া। অনলাইনে পড়াশুনোর পাশাপাশি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ফর্ম ফিলাপও করে নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, মির্জানার সহপাঠীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অ্যাডমিট কার্ড চলে আসে। কিন্তু অ্যাডমিট কার্ড আসেনি মির্জানার। তা নিয়ে গত কয়েকদিনে খুব চিন্তিত ছিল সে। পরিবারের সদস্যরা তাকে বারবার বুঝিয়েছেন। তবুও জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাতেই না বসতে পারার আশঙ্কা গ্রাস করেছিল তাকে। সহপাঠীদের সকলের অ্যাডমিট এলেও মির্জানার অ্যাডমিট আসেনি।
সোমবার থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। স্কুলেও বারবার আবেদন জানিয়েছে মির্জানা। তবুও শনিবার বিকেল পর্যন্ত কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় মানসিক অবসাদে ভেঙে পড়ে মির্জানা। শনিবার বিকালেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে মির্জানা। বাড়ির লোক তখনও বোঝায়। এরপর পড়তে বসতে বলে নিজের ঘরে চলে যায় সে। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, মির্জানাকে সন্ধ্যার টিফিন দেওয়ার জন্য অনেকবার ডাকা হচ্ছিল। তখন সাড়া দিচ্ছিল না সে। বাড়ির লোকের সন্দেহ হয়।
ঘরের জানলা দিয়ে পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গামছার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল মির্জানা। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন পরিবারের সদস্যরা। মির্জানাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মানসিকভাবে ভীষণরকম বিধ্বস্ত মির্জানা। কেন অ্যাডমিট কার্ড পেতে দেরি হচ্ছে মির্জানার?
তবে মির্জানার কথায় উঠে আসছে বিস্ফোরক তথ্য। জানা যাচ্ছে, একটা সইয়ের সমস্যার কারণেই মির্জানার অ্যাডমিট কার্ড পেতে সমস্যা হচ্ছে। আর সেক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষিকারা নাকি তাকে দিয়ে একটি মুচলেকাও লিখিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। মির্জানা বলল, ‘আমি স্কুলের সব পরীক্ষা দিয়েছি। প্রজেক্ট জমা দিয়েছি, কিন্তু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে পারব না। আমার নাকি একটা সইয়ের জন্য সমস্যা। তো আমাকে তো রোল নম্বরটা দিয়ে দিতে পারত। ম্যামদের বলেছিলাম। ম্যামরা আমাকে দিয়ে জোর করে কাগজে লিখিয়ে নিয়েছিল, আমার ভুলের কারণেই অ্যাডমিট কার্ড পাইনি। আমি সেই চিঠি লিখতে চাইনি। তাও লিখতে হয়েছে।’ এই ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসক সুকান্ত সাহা।
মির্জানার মতো এরকম একাধিক ছাত্রছাত্রীর অ্য়াডমিট কার্ড না আসার খবর রয়েছে। এই ছাত্রছাত্রীরা পর্ষদের কাছে গিয়ে আবেদন জানিয়েছে। তাতেও মেলেনি সুরাহা। গত কয়েকদিন আগে বেশ কয়েকজন পড়ুয়া পর্ষদের অফিসের সামনেও বিক্ষোভ দেখায়। এই নিয়ে পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘পরীক্ষার কয়েকদিন আগে এসে আবেদন করলে কোনওভাবেই অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া সম্ভব নয়।’