দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ৬ দিনের বাঘবন্দির খেলা শেষ। তবে নতুন করে ঝড়খালিতে বাঘের আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। বুধবার সকালে বাঘের পায়ের ছাপ খোঁজার কাজ শুরু করেছেন বনকর্মীরা। বন দফতরের মাতলা রেঞ্জের অন্তর্গত ঝড়খালি বিটের কর্মীরা পায়ের ছাপ খতিয়ে দেখছে।
মূলত এই এলাকায় মাঝে মধ্যেই সুন্দরবনের হেড়োভাঙা জঙ্গল থেকে বাঘ নদী সাঁতরে চলে আসে লোকালয়ে। তাই গ্রামবাসীদের কাছ থেকে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়ার খবর পেয়েই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বনকর্মীরা। আদৌ সেখানে বাঘ এসেছিল কিনা, তা জানতে নদীর চরে ম্যানগ্রোভের ঝোঁপে তল্লাশি শুরু হয়েছেl অনেক সময় বন্য বিড়াল কিংবা বাঘরোল চলে আসে লোকালয়েl তাদের পায়ের ছাপকে ঘিরেও বাঘের আতঙ্ক দেখা দেয় এলাকায়।
একটানা ৬ দিন ধরে কুলতলিতে চলে বাঘবন্দির খেলা। বাঘকে ধরতে গিয়ে গত ছ’দিনে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি বনকর্মীদের। ট্রাঙ্কুলাইজার নিয়ে বনকর্মীদের অভিযান, পিয়ালি নদী থেকে দমকলকর্মীদের জল স্প্রে, জঙ্গলে লঙ্কা বোমা নিক্ষেপ- কী না করা হয়েছে! কিন্তু বাঘ ছিল তার নিজের অবস্থানেই। বন দফতরের কর্মীরা তাকে নাগালে পাননি। শোনা যাচ্ছিল তার গর্জন, চোখে পড়ছিল পায়ের ছাপ, শুধু দেখা দিচ্ছিল না সে-ই।
কয়েকদিন ধরে অভুক্ত ছিল বাঘটি। তাই সে যেখানে ছিল, সেখান থেকে বের হচ্ছিল না। বাঘটির দেখা মিলতেই পরপর দুটি ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। গুলি করার কিছুসময় পরেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে বাঘটি। পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে গেলে ডোরাকাটাকে পরীক্ষা করতে যান পশু চিকিৎসক ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মীরা। বাঘটির স্বাস্থ্য় পরীক্ষা করা হয়। পিয়ালি নদীর পাড় থেকেই পাকড়াও করা হয় বাঘটিকে। বনকর্মীরা জানাচ্ছেন, বাঘটি পুরুষ। পূর্ণবয়স্ক। আপাতত সুস্থ আছে।
বুধবার সাতসকালে বনদফতরের তরফে রামগঙ্গা রেঞ্জের অন্তর্গত ঢুলিভাসানি ৪ নম্বর জঙ্গলেরামগঙ্গা রেঞ্জের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয় কুলতলির লোকালয়ে চলে আসা চালা বাঘটিকে।
ঘড়ির কাঁটাতে এদিন ৬:৫৫ হতেই ডিএফও মিলন কান্তি মন্ডলের নির্দেশে জঙ্গল লাগোয়া নদীর জলে বাঘের খাঁচার মুখ খুলে দেওয়া হয়। বাঘটি মুক্তির স্বাদ পেতেই খাঁচা থেকে নেমে পড়ে নদীর জলে। এরপর আস্তে আস্তে নতুন ঠিকানার পথে পাড়ি দেয়। যাওয়ার সময় ফিরে দেখে বন কর্মীদের দিকে। বাঘটিকে নিজের পরিবেশে ফেরাতে পেরে খুশি বন কর্মীরাও।
তবে এক আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই ঝড়খালিতে নতুন করে পায়ের ছাপ ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ফের বাঘ নাকি অন্য কোনও বন্য প্রাণী? নতুন করে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা।