Left-Congress-ISF Alliance In Bhangar: জেতা বুথেও ভাঙছে মোর্চা, ভাঙড়ে ‘ঝাঁকের কই’ তৃণমূল

Bhangar: তাত্‍পর্যপূর্ণভাবে, এইদিনের এই যোগদান অনুষ্ঠান ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রেজিনা বিবির বাড়ির ঠিক পাশেই ৫৬ নম্বর বুথে যোগদান কর্মসূচি চলে। অথচ, বিধানসভা নির্বাচনে ওই বুথেই তৃণমূলের থেকে বেশি ভোট পেয়েছিলেন নওশাদ সিদ্দিকি

Left-Congress-ISF Alliance In Bhangar: জেতা বুথেও ভাঙছে  মোর্চা, ভাঙড়ে 'ঝাঁকের কই' তৃণমূল
ভাঙড়ে ক্রমেই রাশ আলগা হচ্ছে সংযুক্ত মোর্চার, ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 19, 2021 | 8:19 PM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ভাঙড়ে অব্যাহত মোর্চার ভাঙন। একের পর এক কর্মী আইএসএফ (ISF) ছেড়ে যোগ দিচ্ছে তৃণমূলে, যেন ‘ঝাঁকের কই’! কিছুদিন আগেই ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির বাড়ির পাশেই প্রায় সাড়ে তিনশো কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। ফের, শুক্রবারও ভাঙড়ের ছয়আনি গ্রামের বেশ কিছু  আইএসএফ কর্মী মোর্চা ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। ওই এলাকার তৃণমূল নেতা (TMC Leader) তথা পঞ্চায়েত সদস্য  খইরুল ইসলামের হাত ধরে এই যোগদান পর্ব চলে।

জানা গিয়েছে, এদিন দলীয় যোগদান পর্বের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। আইএসএফ কর্মীদের তৃণমূলে যোগদান প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “আমাদের ভুল বোঝাবুঝির কারণে কিছু মানুষ দূরে সরে গিয়েছিলেন। তাঁরা আবার ফিরে আসছেন। আমরা খুশি। তৃণমূলের উন্নয়ন দেখেই তাঁরা নিজেদের পুরনো দলে ফিরছেন। যাঁরা দলে ফিরে এসেছেন তাঁদের সকলকে স্বাগত।”

তাত্‍পর্যপূর্ণভাবে, এইদিনের এই যোগদান অনুষ্ঠান ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রেজিনা বিবির বাড়ির ঠিক পাশেই ৫৬ নম্বর বুথে যোগদান কর্মসূচি চলে। অথচ, বিধানসভা নির্বাচনে ওই বুথেই তৃণমূলের থেকে বেশি ভোট পেয়েছিলেন নওশাদ সিদ্দিকি। এমনকী, ওই বুথে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল সংযুক্ত মোর্চা। সেখানেই তৃণমূলের এই যোগদান অনুষ্ঠান বেশ লক্ষ্যণীয় বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

তবে, ভাঙড়ে বরাবরই ‘তৃণমূলী সন্ত্রাসের’ শিকার হয়েছেন বিধায়ক নওশাদ এমন অভিযোগ করেছেন। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদের (Nawshad Siddique) মন্তব্য, “যারা আইএসএফ ছাড়ছে তাদের দল ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বা ভয় দেখানো হচ্ছে। মাঝেরহাটে আমি বেশ কিছুদিন আগে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম, কিন্তু থাকতে পারিনি। তৃণমূলী সন্ত্রাসের জেরে আমাকে সেভাবে পায়নি এলাকার মানুষ। ইতিমধ্যে বেশকিছু আইএসএফ কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। তবে সেই যোগদান ভক্তিতে নয়, ভয়ে। তবে আমি ভাঙড়ের মানুষকে, আমার আইএসএফ ভাইদের বলব, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি  আপনাদের পাশে রয়েছি।”

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির অভিযোগ ছিল, শাসক শিবির ইচ্ছে করেই সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে এই অভিযোগ প্রথম নয়। বিভিন্ন সময়েই এই অভিযোগ করেছে ভাইজানের দল।  কয়েকদিন আগেই শিরোনামে উঠে আসে ভাঙড়। আইএসএফ (ISF) -তৃণমূলের (TMC) সংঘর্ষ, হামলা-পাল্টা হামলা, পুলিশি ধরপাকড়, বোমা-গুলিতে ত্র্যস্ত এলাকা। তবে গত কয়েকদিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতীয়মান ভাঙড়ের (Bhangar) ভাঙাগোড়ার খেলা।

২০২১ বিধানসভা ভোটে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নিকটতম তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল করিমের থেকে ২৬ হাজার ২১৩টি ভোট বেশি পেয়ে জয় পেয়েছিলেন সংযুক্ত মোর্চার আইএসএফ প্রার্থী নওশাদ সিদ্দিকি। দক্ষিণ ২৪ পরগণার ৩১টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূলের হাত ছাড়া হয়েছিল ভাঙড়। সারা রাজ্যে সংযুক্ত মোর্চা এই ভাঙড় বিধানসভাই শুধু মুখ রক্ষা করতে পেরেছে।

স্বাভাবিক ভাবে ভাঙড়কে ঘিরে আইএসএফের উন্মাদনা ছিল প্রথম থেকেই। কিন্তু পদে পদে বাঁধা। ইয়াসের পর ভাঙড় থানায় বিধায়ক বৈঠক করতে আসলে বয়কট করেন প্রশাসন। থানার বাইরে নওসাদকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। দু-এক জায়গায় বিধায়ক সাধারণ মানুষের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনলেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি কিছুই।

বিধায়ক হিসাবে ভাঙড় এলাকায় কিছুই করতে পারেনি নওশাদ, এমনটি অভিযোগ বিরোধীদের। অন্য দিকে সরকারি পরিষেবা না দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করাচ্ছে তৃণমূলের নেতারা, অভিযোগ আইএসেফের। রাজনৈতিক এই পেক্ষাপটে আব্বাস সিদ্দিকি রবিবার ভাঙড়ের পদ্মপুকুরে সভা করতে আসার পথে পুলিশ ও আব্বাস অনুগামীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে। সোমবার ভাঙড়ের জয়পুরে সভা বাতিল করেন আব্বাস অনুগামীরা।

এলাকার তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম দাবি করছেন, “একটা ধর্মীয় আবেগ নিয়ে আইএসএফ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছিল হয়তো, কিন্তু বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে আইএসএফ কোনও প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারেনি।”

পরিসংখ্যান বলছেন, গত নির্বাচনে ২৬ হাজারের বেশি ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল আইএসএফ। আর ১৫ শতাংশ ভোট কমেছিল তৃণমূলের। তাহলে কি সত্যিই পুরোটাই আবেগে? কিন্তু এখন এর প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতা কোহিনুর মজুমদার বলেন, “আইএসএফ নির্বাচনমুখী দল। যে দলটা সারা বছর মানুষের কাছে থাকে। আইএসএফের নীতি আদর্শ কিছুই নেই। মানুষ আবেগের বশে ভোট দিয়েছে। তবে মানুষের দুর্যোগে আইএসএফ পাশে নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আইএসএফ বলে যে কোনও দল ছিল, সেটাই আর থাকবে না।”

এলাকারই এক আইএসএফ কর্মী বলেছেন, “আমাদের ভয় দেখানো হয়। কিন্তু আমরা মনেপ্রাণে আইএসএফ করি, ওটাই করব।” তৃণমূলের যোগ দিয়ে আরেক আইএসএফ কর্মীর বিস্ফোরক উক্তি, “আইএসএফ করতাম একসময়ে। কিন্তু তখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কেস দিয়েছে। আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এখনও সরকারি কোনও সুযোগ সুবিধাই পাইনা।”

এদিকে, আবার আরাবুল ইসলাম বলছেন, “ভাঙড়ের অনেক অঞ্চল থেকে শয়ে শয়ে আইএসএফ কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের ভয় দেখাতেও হয়নি, মারতেও হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন পরিষেবা দেখেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন ভুল করেছে আইএসএফ করে। তাই ফিরছেন।”

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ভোট ধরে রাখা কতটা চ্যালেঞ্জের আইএসএফের? এই নিয়ে এক আইএসএফ নেতা বিশ্বজিত্ মাইতি বলেন, “বাংলার ২৯৪ জন এমএলএ, এক জন বিধায়ককে ভয় পাচ্ছেন। ভাঙড়ে যখন ওরা পেরে উঠছে না, তখন পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই সন্ত্রাস হচ্ছে। ভাঙড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সবাই জানে। আরাবুল কিংবা কাইজার কখনই নিজেদের কথা বলেনি। বলতেও পারেনি। আমরা ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলছি। আমরা পরিবর্তনের কথা বলছি। দলের স্ট্র্যাটেজি আমরা সবাইকে বলব না। তবে বিধায়ক এলাকায় যাচ্ছেন।” ধীরে ধীরে গড় ছোট হচ্ছে সংযুক্ত মোর্চার। আইএসএফ যে ভাঙড়কে ঘিরে গোটা রাজ্যে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্ঠা করেছিল ভাঙড়ের সেই গড় তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ছে, অন্তত এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খবর পজিটিভলি করুন…বিজ্ঞাপন নিশ্চই পাবেন’