দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ভাত কেন নষ্ট হয়েছে! এই নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে ঝামেলা আর রাগের জেরে তিন বছরের ছেলের গায়ে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিলেন মা! মর্মান্তিক ঘটনা ক্যানিংয়ের (Canning) তালদির চাঁদখালি এলাকায়। অভিযোগ পেয়ে শিশুটির মা ও বাবাকে আটক করেছে পুলিশ।
বারুইপুরের রাসমাঠ এলাকার অর্পিতার সঙ্গে বছর ছয়-সাতেক আগে তালদির চাঁদখালির দেবাশিস আচার্যের বিয়ে হয়। দম্পতির বছর তিনেকের এক ছেলে রয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার বেশি ভাত রান্না করে ফেলেছিলেন অর্পিতা। ভাত নষ্ট হওয়ায় শ্বশুরের সঙ্গে ঝামেলা হয় তাঁর। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্য়েই ভাত বেশি রান্না করে ফেলতেন অর্পিতা, তা নিয়ে ঝামেলা আগেও হয়েছে। বুধবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়।
ভাত নষ্ট হওয়ায় অর্পিতার শ্বশুর হরিহর আচার্যের এক প্রস্থ ঝগড়া হয়। তাতেই মাথা গরম ছিল অর্পিতা। তার মধ্যে কান্নাকাটি করছিল ছেলেও। মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে পারেননি অর্পিতা। অভিযোগ, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন অর্পিতা। তারপর গ্যাস ওভেনে খুন্তি গরম করে নিজের সন্তানের গায়ে লাগিয়ে দেন।
একবার নয়, ছেলে যত কাঁদতে থাকে, ততবার ছ্যাঁকা দিতে থাকেন তিনি। গরম খুন্তির ছ্যাঁকায় শিশুটি চিৎকার করতে থাকেন। মা ছেলেকে শাসন করছেন, মারছেন ভেবে প্রতিবেশীরা প্রথমে বিষয়টিতে আমল দেননি। কিন্তু তারপর চিত্কারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ায় প্রতিবেশীদের হুঁশ ফেরে।
অন্যান্য ছুটে আসেন। বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন প্রতিবেশীরা। বাড়ির সদস্যরাও তখন বিপদ আঁচ করতে পারেন। সে সময় বাড়িতে ছিলেন না অর্পিতার স্বামী দেবাশিস। প্রতিবেশীরাই দেবাশিসকে খবর দেন। স্থানীয় এক মহিলা সমিতির সদস্যদের ডেকে নিয়ে আসেন দেবাশিস। তারপর ঘটনাস্থলে হাজির হন মহিলা সমিতির একাধিক সদস্যা।
দরজা কার্যত ভেঙে শিশুটিকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশী ও মহিলা সমিতির সদস্যরা। তাকে চিকিৎসার জন্য ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোট্ট শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষত তৈরি হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন সে।
ঘটনার খবর পেয়ে ক্যানিং থানার পুলিশ শিশুর বাবা ও অভিযুক্ত মা কে আটক করেছেl পাশাপাশি শিশুটির উপর কেন এমন অত্যাচার করা হল, তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্পিতার মানসিক অবস্থা কেমন, তা খতিয়ে দেখা হবে।
অন্যদিকে অর্পিতার শ্বশুরের অভিযোগ, অর্পিতা নাকি প্রতিদিনই নানা কারণে অশান্তি করত। আর নিজের ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাঁদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন বলে অভিযোগ। এমনকি অর্পিতা নিজেও কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি শ্বশুরের। সবই নাকি তাঁদের ফাঁসানোর চক্রান্ত। শ্বশুরের বয়ানও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অন্যদিকে, অর্পিতা দাবি করছেন, তাঁর স্বামী-শ্বশুর-ভাসুর তাঁর ওপর প্রতিদিন অত্যাচার করতেন। তাঁর ছেলেকেও নাকি মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। তাঁর কথায়, “রোজকার অশান্তিতে আমার মাথার আর ঠিক ছিল না। রাগ উঠে যায় মাথায়। আমার ছেলেটার ওপর গিয়ে সব রাগ পড়ে। কাউকে কিছু করতে না পেরে ছেলেটাকেই রাগের মাথায় মারতে থাকি। ওকেই গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে দিই।” পুলিশ দুপক্ষেরই বয়ানই খতিয়ে দেখছে। অর্পিতার শাস্তির দাবি তুলেছেন প্রতিবেশীরাও। আরও পড়ুন: বাঁ হাতের মাংস খুবলে তুলে নিয়েছে কেউ! তৃণমূল নেতার রহস্যমৃত্যু