সন্দেশখালি: হাজি নুরুল ইসলাম। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের বিজয়ী প্রার্থী। সন্দেশখালি-ইস্যু যে এই লোকসভায় কোনও ফ্যাক্টর হয়নি, তা প্রমাণ করলেন তিনি। সন্দেশখালি ইস্যু নিয়ে যখন তপ্ত হয়েছে বাংলা, যখন প্রত্যন্ত এই গ্রাম জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, দিল্লি থেকে প্রতিনিধি দলরা ছুটে এসেছেন বারেবারে, তখন গোটা পরিস্থিতিতে দলের পুরনো ‘সৈনিকে’র ওপরই আস্থা রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর নেত্রীর মুখ রক্ষা করলেন হাজি নুরুল। আন্দোলনের সন্দেশখালির আন্দোলনের মুখ রেখা পাত্রকে দাঁড় করিয়েও বসিরহাট লোকসভায় দাঁত ফোটাতে পারল না বিজেপি।
ব্যাপক ভোটে জয়ী হাজি নুুরুল
সন্দেশ হাজি নুরুলের প্রাপ্ত ভোট ৮,০৩,৭৬২। ৫২ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। আর তার প্রতিপক্ষ সন্দেশখালির আন্দোলনের মুখ রেখা পাত্র পেয়েছেন অর্ধেক ভোট। রেখা পাত্র পেয়েছেন ৪,৭০,২১৫ ভোট।
হাজি নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন
বারাসতের ছোট জাগুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন হাজি নুরুল। পরে বসিরহাটের দিকে চলে আসেন। রাজনৈতিক জীবনের সূচনা পুরনো কংগ্রেসী ঘরনারা হলেও ১৯৯৮ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ২০০৯ সালে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। জয়ীও হন। পরে অবশ্য তাঁর বদলে টিকিট দেওয়া হয়েছিল তারকা প্রার্থী নুসরত জাহানকে। বিরাট অঙ্কের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন নুসরত। কিন্তু তারপর? তারপরের বিষয়টা সকলের কাছেই প্রতীয়মান।
চলতি বছরের শুরু করে লাইমলাইটে চলে আসে সন্দেশখালি। রেশন দুর্নীতি মামলায় শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডি-র তল্লাশি অভিযান থেকে এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। তারপর সন্দেশখালির মাটিতে জ্বলে বিক্ষোভের আগুন। জমি দখল, নারী নির্যাতনের অভিযোগে ঝাঁটা লাঠি হাতে রাস্তায় নামেন সন্দেশখালির মহিলারা। নাম জড়িয়েছিল দাপুটে নেতা শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার, শিবু হাজরাদের নাম। তাতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছিল তৃণমূল।
আর সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বারবার প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে, প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের টিমকে পাঠিয়ে, সন্দেশখালির আন্দোলনের মুখ রেখা পাত্র দাঁড় করিয়েও লাভ হল না বিজেপির। বাজি মেরে দিলেন হাজি নুরুল।
কোন জাদুতে বাজিমাত?
বসিরহাটের ঘরের ছেলে হাজি নুরুল। নুসরতকে পাঁচটা বছর ধরে যেভাবে দেখেছিলেন বসিরহাটের মানুষ, তারপর সন্দেশখালি অধ্যায়ের পর সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ‘তারকা-চমক’ পুরোটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল। তাই আর কোনও চমক রাখতে চায়নি তৃণমূল। হাজি নুুরুল, যাঁকে সেখানকার মানুষ চেনেন, তাঁকেই প্রার্থী করেন। আর প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম ঘোষণার পরই সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়েছিল TV9 বাংলা। উল্লেখ্য, সন্দেশখালি তখন জ্বলছে… তার মধ্যেই সেখানকার মানুষদের বলতে শোনা গিয়েছে, হাজি নুরুলকে তাঁরা চেনেন। তাঁর কাজ দেখেছেন। পুরনো চাল যে ভাতে বাড়ে, তা প্রমাণ হল ফলে! বয়স প্রায় ষাট পেরিয়েছে। প্রচণ্ড গরমে প্রচারে বেরিয়ে অসুস্থ হয়েছেন, চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রামে থেকেছেন, কিন্তু তারপরও মাঠে নেমে লড়াইটা করেছেন তিনি। বসিরহাট লোকসভার বেশিরভাগ বিধানসভা এলাকায় জঙ্গলে ঘেরা মেঠো গ্রাম। সেখানকার মানুষের কাছে তারকা চমক নয়, মেঠো মানুষই বেশি গ্রহণযোগ্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফ্যাক্টর হয়েছে সংখ্যালঘু ভোটও। হাজি নুরুল প্রমাণ করলেন সন্দেশখালি কোনও ফ্যাক্টর হল না।