AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Child Death: ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ, একদিনের মধ্যেই রায়গঞ্জ মেডিক্যালে ফের জ্বরে মৃত্যু ২ সদ্যোজাতর!

Raiganj Medical College: সূত্রের খবর, দিন তিনেক আগে প্রবল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই ২ সদ্যোজাত হাসপাতালে ভর্তি হয়। একজনের বয়স ১ দিন, অন্যজনের বয়স ১৩ দিন।

Child Death: ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ, একদিনের মধ্যেই রায়গঞ্জ মেডিক্যালে ফের জ্বরে মৃত্যু ২ সদ্যোজাতর!
ফের বিপদ বাড়াচ্ছে জ্বর (নিজস্ব চিত্র)
| Edited By: | Updated on: Nov 10, 2021 | 1:05 PM
Share

উত্তর দিনাজপুর: গোটা একদিনও পেরল না। তারমধ্যেই ফের আবারও জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগে মৃত্যু হল ২ সদ্যোজাতর। সেই রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজেই। আর এতেই ফের উঠছে প্রশ্ন। পাশাপাশি, শিশুদের পরিবারের মধ্যেও বাড়ছে উদ্বেগ। যদিও, বরাবরের মতো এ বারেও ‘মরসুমি’ জ্বরেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সূত্রের খবর, দিন তিনেক আগে প্রবল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই ২ সদ্যোজাত হাসপাতালে ভর্তি হয়। একজনের বয়স ১ দিন, অন্যজনের বয়স ১৩ দিন। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরে ওই দুই শিশুর আরটিপিসিআর টেস্ট করানো  হয়। কিন্তু, পরীক্ষায় কোভিড ধরা পড়েনি বলেই জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুর কারণ নিয়ে যদিও স্পষ্ট করে কিছু  জানা যায়নি। হাসপাতালের তরফে দাবি করা হয়েছে মরসুমি জ্বরেই মৃত্যু হয়েছে ওই দুই নবজাতকের।

এক মৃত শিশুর পরিবারের কথায়, “আল্লা আমাকে সন্তান দিয়েছিল। রাখতে পারলাম না। বাচ্চাটার জ্বর এলো। হাসপাতালে আনলাম। ৬দিন এখানেই ছিল। তারপর সুস্থ ছিল। হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে গেলাম। পাঁচদিন পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়ল। তখন ফের হাসপাতালে এনে গতকাল ভর্তি করলাম। আজ সকালেই মারা গেল। জ্বরই  নামছিল না। ”

বারবার কেন এইভাবে একের পর এক শিশুর জ্বরে মৃত্য়ু হচ্ছে? মাত্র একদিনের ব্যবধানে  এভাবে মৃত্যু কার্যত কপালে ভাঁজ ফেলেছে  চিকিত্‍সকদের। এদিকে, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুর ভর্তি সংখ্যা হাসপাতালে বেড়েই চলেছে। দু-একজনের কোভিড ধরা পড়লেও বাকিদের ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু, তখন কোনও শিশুরই কোভিড ধরা পড়েনি। তাহলে ‘মরসুমি’ জ্বর থেকে কেন এমন মৃত্যু? কেনই বা কেবল রায়গঞ্জ মেডিক্যালেই এভাবে শিশুমৃত্য়ু হচ্ছে?

যদিও,  মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ও এসএনইউসির ইনচার্জ  চিকিত্‍সক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্য়ায়ের কথায়, “এটা মরসুমি জ্বরের ফলেই হচ্ছে। যেকোনও শিশুর মৃত্যুই দুঃখজনক। প্রতিবছরই এই সময়ে শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হয়। এখন নতুন করে নভেম্বরের ঠাণ্ডা পড়ছে। এরমধ্যে চুল কেটে মুণ্ডন করা যে শিশুদের জন্য কী ভয়ানক তা বলে বোঝানোর নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা!”

অন্যদিকে,  রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল কৌশিক সমাজদার বলেন, “কেবল ঠাণ্ডা পরার জন্য নয়, পরিবেশও শিশুদের মৃত্যুর জন্য কারণ। হয়ত সেই শিশু জন্মেছেই দুর্বলভাবে। তার কোনও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই হয়ত তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেই শিশু যদি জ্বরে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাকে বাঁচানো সম্ভব কী করে!”

চিকিত্‍সক সুমন পোদ্দারের যদিও দাবি, এভাবে জ্বরে আক্রান্তের ক্রমবৃদ্ধির নেপথ্যে কোনও বিশেষ ভাইরাসের জন্য হতে পারে। সেই ভাইরাসের স্যাম্পেল প্রসেস ঠিক মতো করতে পারলে জ্বরের কারণ ধরা পড়তে পারে। তবে সেই পরীক্ষা কতটা করা সম্ভব সেটাই দেখার। প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহে, রায়গঞ্জ মেডিক্যালের এসএনসিইউতে মোট ১১ জন সদ্যোজাতর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে সোমবারই রায়গঞ্জে দুই সদ্যোজাতর মৃত্য়ু হয়েছে। সূত্রের খবর, কিছুদিন আগেই জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ওই দুই সদ্যোজাত। একজন ৭ দিনের পুত্র সন্তান, অন্যজন ৩ দিনের কন্যা সন্তান। দুজনেই এসএনসিইউতে ভর্তি ছিল। ৭দিনের ওই শিশু হরিরামপুরের বাসিন্দা  ও ৩ দিনের ওই কন্যা রায়গঞ্জের ভাটোলের বাসিন্দা।

মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, জনসাধারণের অসচেতনতা ও অসাবধানতাই এইভাবে জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ। যেভাবে করোনা বিধি অমান্য করে হেলায় মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। কিছুদিন আগেই করোনা আক্রান্ত এক শিশুকে হাসপাতাল থেকে লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে চলে যান তার পরিবার। সেই ঘটনায় জেলা দফতরে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়ায়। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে ওই শিশুকে ফের হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু, কড়া নজরদারির মধ্যে কী  করে এই শিশু হাসপাতালের বাইরে গেল তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন ওঠে হাসপাতালের অন্দরেই।

রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবারই ৩জন এবং গত ৭২ ঘন্টায় ৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই শ্বাসকষ্ট নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের এসএনসিইউতে ভর্তি ছিল বলে জানা গিয়েছে। শিশু বিভাগে ভর্তি এখনও বেশিরভাগ শিশুরই সর্দি-কাশি, তীব্র শ্বাসকষ্টের সঙ্গে জ্বরের মতো উপসর্গ রয়েছে। আর তাতেই শিশুদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা।

যদিও এখনও শুধু কোভিড নাকি শিশুদের মৃত্যু ঠিক কী কারণে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এদিকে অনেক সদ্যোজাতদের জন্মের পর তাদের মাথা মুণ্ডন করায় সেপ্টিক হয়ে জ্বর হচ্ছে। ঠান্ডা লেগে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের শিশু চিকিৎসকদের একাংশ। তবে এই শিশুদের মধ্যে কোভিড সংক্রমন রয়েছে কিনা তার জন্য টেস্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই শিশুমৃত্যুর মূল কারণ কী আর তাদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ কতটা তা নিয়ে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কোনও প্রতিক্রিয়া এ পর্যন্ত মেলেনি। তবে এই ঘটনা রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের যথেষ্টই চিন্তায় ফেলেছে তা স্পষ্ট।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে একের পর এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে অজানা জ্বরে। কিছু ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসাকে করোনা ভাইরাস, টাইফয়েডকে দায়ী করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যু ও আক্রান্তের কারণ স্পষ্ট হয়নি। বিশেষত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এই শিশু আক্রান্ত ও মৃত্যু চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যের চিকিৎসক মহল ও প্রশাসনকে। রায়গঞ্জ হাসপাতালে এমন  আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ চিকিৎসকদের।

আরও পড়ুন: Dengue: বিধাননগরে ‘আতুঁড়ঘর’ ডেঙ্গুর! এলাকায় আবর্জনার স্তুপ, পাশেই আবার কাঁচা নর্দমা