উত্তর দিনাজপুর: ঠেকানো যাচ্ছে না শিশুর মৃত্যু। ফের রায়গঞ্জ মেডিক্যালে শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের (Raiganj Medical Hospital) এসএনসিউতে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাতে একটি ও মঙ্গলবার সকালে দুটি শিশুর মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে, প্রত্যেক সদ্যোজাতই শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। এর পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে দুই কোভিড আক্রান্তের।
মৃত সদ্যোজাতদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিন শিশুই জ্বরে আক্রান্ত ছিল। সঙ্গে ছিল শ্বাসকষ্টও। তাই মেডিক্যাল কলেজে এনে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তারপরে, মাত্র একদিন যেতে না যেতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তিনটি সদ্যোজাত প্রাণ। জানা গিয়েছে, ওই তিন শিশু কোভিড আক্রান্ত ছিল না। শুধু তাই নয়, মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে দুই কোভিড আক্রান্তেরও। রায়গঞ্জ শহরে প্রায় ৬০ জন ও জেলায় প্রায় ৩০০ একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ফের শিশু মৃত্যু কার্যত ভয় ধরাচ্ছে।
রায়গঞ্জ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি যদিও, যে শিশুগুলি মারা গিয়েছে তারা প্রত্যেকেই প্রথম থেকে অপরিণত। বাদ-এক্সপেশিয়ায় ভুগছিল ওই তিন শিশু। কোনওভাবেই শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হয়নি ওই তিনটি শিশুর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, ওই তিন শিশু প্রথম থেকেই অপুষ্টিতে ভুগছিল। নূন্যতম ওজন নিয়েও জন্মায়নি তারা। তবে, এই মৃত্যুর সঙ্গে করোনার কোনও সম্পর্ক নেই বলেই স্পষ্ট জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কয়েকমাস আগেও রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে রোজই ভর্তি হচ্ছিল জ্বরে আক্রান্ত শিশুরা। কখনও একজন-দুইজন, কখনও বা একদিনে ছয়-সাতজন। ক্রমেই বেড়েছিল সেই আক্রান্তের সংখ্যা। এই আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই ইটাহার ও রায়গঞ্জের। এছাড়াও দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর-সহ একাধিক এলাকা থেকে শিশুরা ভর্তি হয়। কিছুজন ভর্তি হয় বিহার থেকেও।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবছর এই শিশুমৃত্যু হয়ে থাকে। মরসুমি জ্বরের কারণে বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হয়। যা অত্যন্ত সাধারণ। কিন্তু এ বছর আচমকা এই মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলেই দাবি করছেন চিকিত্সকেরা। প্রথমত, দেখা গিয়েছে যে সকল শিশুদের মৃত্য়ু হয়েছে সেই তারা প্রত্যেকেই হয় প্রিম্যাচিওর সন্তান, বা অনাক্রম্যতা কম। শুধু সেটা নয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে থাকা শিশুদের অনেকেই নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত। কখনও হার্টের অসুখ, কখনও বা অন্য কোন জটিল রোগ। ফলে মৃত্য়ু বেড়েছে।
শিশুদের অভিভাবক ও হাসপাতালের বেশ কিছু শিশু বিশেষজ্ঞদের দাবি, রায়গঞ্জ মেডিক্যালেই একমাত্র শিশুদের জন্য জরুরি বিভাগ ও পৃথক শিশুবিভাগ রয়েছে। জেলার আর কোনও হাসপাতালে এই ব্যবস্থা নেই। ইসলামপুরে শিশুবিভাগ থাকলেও সেখানে শিশুদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ জরুরি বিভাগের ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেকটাই চাপ থাকে এই মেডিক্যাল কলেজের উপর।
উল্লেখ্য, জেলাতে করোনা পরিস্থিতিও বেশ উদ্বেগজনক। গতকাল আক্রান্ত হয়েছেন ২২১ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২৯০ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১০৩ জন। রবিবার ও সোমবার সবমিলিয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: Republic Day Tableau: ‘ট্যাবলো নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন’