Kali Puja 2021: সাধক বামাক্ষ্যাপার উত্তরসূরিরাই পুজো করেন এই মন্দিরে! জানুন বন্দরের আদিকালীর ইতিহাস
North Dinajpur: দেবীকে শোল ও বোয়াল মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়ার রীতি আজও চলছে।
উত্তর দিনাজপুর: শোল-বোয়ালের ঝোলে পঞ্চমুন্ডির বেদীতে পুজিতা হন বন্দরের আদিকালী। বংশ পরম্পরায় সাধক বামাক্ষ্যাপার উত্তরসূরিরাই প্রধান পুরোহিত এই মন্দিরের। আধুনিক শহরের মাঝে যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক টুকরো ইতিহাস। পুরোনো ঐতিহ্য আর রীতি মেনে আন্তরিকতা আজও প্রবহমান প্রাচীন এই কালীপুজোকে ঘিরে।
একটা সময় ছিল যখন কুলিক নদী দিয়ে বাজরা নিয়ে বাণিজ্যে যেতেন বণিকরা। কিন্তু কালের গ্রাসে হারিয়েছে সেসব। আজ আর কোনও রাজা বা সামন্ত নেই। নেই কোনও বণিক। সংকীর্ণ হয়েছে কুলিকের যাত্রাপথ। তবে প্রাচীন রীতি আর ঐতিহ্য মেনে সেই কুলিক পাড়েই বেশ কয়েক দশক ধরে পুজো হয় আদি কালীর। রায়গঞ্জের বন্দরে দীপান্বিতার রাতে, পঞ্চমুন্ডির বেদিতে কষ্টিপাথরের মূর্তিতে নিয়ম-নিষ্ঠা সহকারে পুজিতা হন করুণাময়ী আদিকালী।
ঠিক কত বছর আগে এই পুজো কে বা কারা শুরু করেছিলেন তা নিয়ে অনেক কাহিনী রয়েছে। তবে মূর্তির বয়স আনুমানিক প্রায় ২০০ বছর। কী তারও বেশি। এই মন্দিরের ভেতরে পঞ্চমুন্ডির বেদির প্রতিষ্ঠাকাল। প্রায় পাঁচ শতাধিক বছরেরও বেশি বলে অনুমান। তাঁরা ভৈরব সাধক বামাক্ষ্যাপার উত্তরসূরিরাই এখনও এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। কুলিক নদীর পাড়ে রায়গঞ্জ শহরের বন্দরে ছোট তিন রাস্তার মোড়ের কোণ ঘেসে আজও মাথা উঁচু করে রয়েছে এক টুকরো ইতিহাস।
এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বহু কথা প্রচলিত আছে। বর্তমান প্রধান পুরোহিত মৃত্যুঞ্জয় চ্যাটার্জি জানান, “আনুমানিক প্রায় ১৪৭০ সালে পঞ্জাবের এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। এরপর তিনি পায়ে হেটে কুলিক নদীর ধারে এই বন্দর এলাকায় পৌঁছে ,বট গাছের নিচে পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করেন। সেই বট গাছ যা আজও মন্দির প্রাঙ্গনেই বহু ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে আছে।”
সে সময় মায়ের কোনও বিগ্রহ বা কোনও মন্দির ছিলো না। আবার সে সময় ঘন জঙ্গলাকীর্ণ এই অঞ্চলে একদল ডাকাতেরা ওই আসনে মায়ের পুজো করত। তারা ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় ও ফিরে আসার পর দু’বার করে মায়ের পুজো দিয়ে যেত। পরে বাণিজ্য যাওয়ার সময় বা ফেরার সময় ধনী ব্যবসায়ীরাও এই বেদিতে পুজো দিয়ে যেতেন। এতে নাকি ডাকাতি হওয়ার কোনও ভয় থাকত না।
পরে আনুমানিক ১৮০৮ নাগাদ অবিভক্ত বাংলার দিনাজপুরের মহারাজা তারকনাথ চৌধুরি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে একটি মন্দির গড়ে তোলেন। সেইসঙ্গে সাধক বামাক্ষ্যাপার উত্তরসুরী জানকী নাথ চট্টোপাধ্যায়কে এই মন্দিরে পুজোর দায়িত্ব দেন। এরপর ১৮০৯ সালে জানকী নাথবাবু বেনারস থেকে কষ্টি পাথরের বিগ্রহ এনে মাতৃ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। যা এখনও এই মন্দিরে বিরাজমান।
পরে এই বন্দর ঘাটের পাশেই গড়ে ওঠে বর্তমান রায়গঞ্জ শহর। যা কিনা আগে নদীবন্দর “রাইগঞ্জ” নামে পরিচিত ছিল। সেই প্রাচীন কাল থেকে পাঁচ পুরুষ ধরে বাম দেবের উত্তরসুরীরাই এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। কালিপুজোর রাতে সমগ্র ভক্ত বৃন্দদের মঙ্গল কামনায় এখানে সপ্তসতী চন্ডীপাঠ ও হোম হয়। তাছাড়া তন্ত্রমতে পুজো হয় বলে পশুবলী প্রথাও আছে।
এমনকী, ওই রাতে দেবীকে শোল ও বোয়াল মাছ দিয়ে ভোগ দেওয়ার রিতি আজও প্রবহমান। আগে দিনাজপুরের রাজ পরিবারের পক্ষ থেকেই পুজোর সমস্ত আয়োজন করা হলেও কালের নিয়মে এখন আর রাজা নেই। তাই পুজোর সমস্ত খরচ সাধারণ ভক্তরা মিলেই করেন। তবে আনন্দময়ী মায়ের অলোকিক বহু ঘটনার নাকি আজও প্রমাণ মেলে। তবে বহু প্রাচীন এই পুজো আজ সর্বজনীন কালিপুজোর রূপ নিয়েছে। যার ঐতিহ্য আর আন্তরিকতায় আজও ভাটা পড়েনি।
আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: ডাকাতির আগে দেবী আরাধনা করত সর্দাররা! মালদহের সেই কালীপুজো এবার পা দিল ৪০০ বছরে