রায়গঞ্জ: রায়গঞ্জের সন্ন্যাসিনী অধ্যাপিকাকে (Professor) নিয়েই জোরা চর্চা চলছে জেলাজুড়ে। নিজেকে ঈশ্বরের পায়ে সমর্পণ করেও কর্মক্ষেত্রে থেকেই সমাজ গঠনের কাজ করে যেতে চান রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Raigan University) ভূগোল বিভাগের অধ্যাপিকা সদ্য সন্ন্যাস নেওয়া রুক্মিনী দাস (রুমকী সরকার)। কর্তব্যে অটল শিক্ষিকা সন্ন্যাস ধর্ম নিয়ে গেরুয়া বসনে নিচ্ছেন ক্লাসও। সন্ন্যাসিনী শিক্ষিকার কাছে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি জীবন দর্শনের শিক্ষা পেয়ে খুশি পড়ুয়ারাও, খুশি তার সহকর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও।
শ্রী রামকৃষ্ণ দেব, স্বামী বিবেকানন্দ, ডঃ এপিজে আব্দুল কালামের জীবন দর্শনকে অনুসরণ করেই রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ডঃ রুমকী সরকার সন্ন্যাস ধর্ম নিয়ে হয়েছেন রুকমিনী দাস। গেরুয়া বসনে ইউনিভার্সিটিতে সময় ধরেই আসছেন, পড়ুয়াদের পড়াচ্ছেনও সেই আগের মতই শান্ত ভঙ্গিমায়। সমাজের বিভিন্ন মহলে বর্তমানে এটাই চর্চার বিষয়। কিন্তু রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন মহলে যেনও সবটাই স্বাভাবিক।
ডঃ রুমকি সরকারের বাড়ি বর্ধমান জেলায়। ২০০৬ সালে বর্ধমানের স্কুলে শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে বীরভুম জেলায় সহকারী অধ্যাপিকা হিসেবে কাজ শুরু। পরবর্তীতে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপিকা হিসাবে কাজ করছিলেন। ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, অশিক্ষক কর্মচারীদের সকলের কথায় চিরকালই খুব শান্ত স্বভাবের রুমকি দেবী। সেই রুমকি দেবী চলতি বছরের পুজোর ছুটিতে ত্রয়ম্বোকেশ্বর গিয়ে সেখানে ক্ষাগেশ্বর মহারাজের কাছ থেকে সন্ন্যাস নিয়ে ফিরেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
আচমকা কেন সন্ন্যাস নিতে গেলেন? এ প্রসঙ্গে রুমকি দেবী জানিয়েছেন, “আমি আমার পরিবারটাকে বড় করে নিয়েছি। আমার মা, দাদা, দিদি আছেন। ওনারা চাইলে আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতেই পারেন। আমি ওনাদের অনুমতি নিয়েই সন্ন্যাস নিয়েছি। আমি এই জীবনে যাওয়ার অভ্যাসে বা প্রস্তুতিতে ছিলাম অনেক দিন থেকে। এবার হঠাৎ করে সন্নাস গ্রহন করে ফেললাম। আমি ছোটোবেলা থেকেই স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রী রামকৃষ্ণ এবং ডাঃ এ.পি.জে আব্দুল কালামের জীবনী পড়ি। ওনাদের আদর্শ ভাল লাগে। সব শেষে রুমকি দেবী জানান কর্মই জীবন, আপাতত পুঁথিগত শিক্ষাই তিনি দিতে চান তার পড়ুয়াদের। কারণ লোক শিক্ষা দেওয়ার জ্ঞান এখনও তিনি অর্জন করে উঠতে পারেননি বলে তাঁর দাবি।
অন্যদিকে পড়ুয়াদের কথায় রুমকি ম্যাম সবসময়ই পড়ুয়াদের খুব কাছের। শান্ত স্বভাব, কথা বলেন শান্ত ভাবে, পড়ান আন্তরিক ভাবে। তবে আচমকাই উনি এভাবে গেরুয়া বসনে কলেজে আসায় প্রথমটায় একটু অবাক হয়েছিলেন সকলেই। তবে পরবর্তীতে গেরুয়া বসনধারী সন্ন্যাসিনীর মধ্যে তাঁরা তাঁদের প্রিয় ম্যামকেই খুজে পান। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডঃ দুর্লভ সরকার বলেন, “ওটা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। ওই ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে উনি খুব ভাল শিক্ষিকা। উনি সন্ন্যাসিনী শিক্ষিকা হলে অসুবিধা কোথায়? অনেক ইউনিভার্সিটিতে সন্ন্যাসি অধ্যাপক আছেন। উনি সন্ন্যাস নিলেও এখানে অধ্যাপিকা হিসেবে কাজ করছেন এটা আমাদের গর্বের।”