উত্তর দিনাজপুর: পুজো শেষ। কিন্তু শিয়রে বিপদ এখন করোনা। রাজ্যে উত্তরোত্তর বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সঙ্গে কাঁপুনি ধরাচ্ছে জ্বর (Unknown Fever)। কখনও তা ডেঙ্গু কখও বা কালাজ্বর। ক্রমেই বাড়ছে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতিমধ্য়েই রায়গঞ্জ মেডিক্যালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েই চলেছে রোগী। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মেডিক্যাল কলেজে মোট ৩৫ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা রোজই গড়ে ৭ থেকে ৮ জন। ভর্তি থাকা ৩৫ জন রোগীর মধ্যে ১১ জনের শরীরেই ডেঙ্গু সংক্রমণ মিলেছে। আরও রোগীর সংখ্যা বাড়লে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের।
জ্বরের বাড়বাড়ন্তের কথা স্বীকার করেছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও। হাসপাতালের সহকারী অধ্যক্ষ প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন, ‘‘জ্বর নিয়ে দৈনিক ৮ থেকে ৯ জন হাসপাতালে আসছেন। জ্বরের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর পাশাপাশি সব রকম পরীক্ষাও করা হচ্ছে। এখানে ডেঙ্গিরও কয়েক জন রোগী আছেন।’’
পরিস্থিতি সামাল দিতে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরির পথে হাঁটছে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ। ডেঙ্গু ছাড়া অন্য় জ্বরের প্রকোপ কেন বাড়ছে তা নিয়ে চিন্তায় মেডিক্যাল কলেজ। ইতিমধ্যেই হাসপাতালে কালাজ্বর নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যায় রাশ টানতে কী কী পদক্ষেপ করা যায় সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমার চাকুলিয়া, গোয়ালপোখরের বেশ কয়েকজন জ্বরে আক্রান্ত রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সেইসঙ্গে ইটাহার, রায়গঞ্জ এবং দক্ষিন দিনাজপুরের বেশকিছু রোগী রায়গঞ্জ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। যাঁদের অনেকেরই এখনও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণ জানা যায়নি। যা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
মিতা ধর নামে এক রোগী বলেন ‘‘এক সপ্তাহ ধরে আমার জ্বর। ওষুধ খেয়েও জ্বর ছাড়ছিল না। শনিবার থেকে রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। সব রকম পরীক্ষা হয়েছে। তবে তেমন কিছু ধরা পড়েনি।’’ দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের বাসিন্দা মহম্মদ সাদেক আলি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী অসুস্থ। ওর ৬-৭ দিন ধরে জ্বর। ওষুধ খেলে কমছে। আবার জ্বর আসছে। করোনা পরীক্ষা পরীক্ষা হয়েছে। তবে কিছু ধরা পড়েনি। বিষয়টা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছি।’’
কয়েকমাস আগে অজানা জ্বরের দাপটে জবুথবু হয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গ। মূলত শিশুদেরই আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলে। একাধিক শিশুমৃত্যুও ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি আসরে নামে রাজ্য স্বাস্থ্যভবন। যদিও, ওই জ্বরকে ‘মরসুমি’ বলেই আখ্যা দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্বর নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পেতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও।
রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত তা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাল প্যানেলে পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তাই কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস ধরা না পড়লে ভাইরাস প্যানেল করতে বলা হয়েছে। পিএম কেয়ার্সে পাওয়া ভেন্টিলেটরকে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন মাস্কে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি HFNO দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Dinhata: গীতালদহ গুলিকাণ্ডে গ্রেফতার বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা মফজুর রহমান
আরও পড়ুন: Dinhata: ‘গৌরী লঙ্কেশের মতো অবস্থা হবে’, TV9-এর চিত্র সাংবাদিককে হুমকি উদয়ন-ভাইপোর!