‘বিশ্বভারতীতে স্বৈরতন্ত্র চলছে’! সহপাঠী ও শিক্ষকের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল পড়ুয়ারা

tista roychowdhury |

Apr 24, 2021 | 12:29 PM

উল্লেখ্য, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে অকারণে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে ইতিমধ্যেই পাশে দাঁড়িয়েছে দেশ ও রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা) (JUTA) বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের ভূমিকার বিরোধিতা করে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল সম্প্রতি। সেই প্রতিবাদ সভায় উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করেছিলেন জুটার সদস্যরা।

বিশ্বভারতীতে স্বৈরতন্ত্র চলছে! সহপাঠী ও শিক্ষকের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল পড়ুয়ারা
আন্দোলনরত পড়ুয়ারা, নিজস্ব চিত্র

Follow Us

বীরভূম: ফের বিক্ষোভের মুখে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুই ছাত্র ও শিক্ষকের সাসপেনশন (Suspension) প্রত্যাহারের দাবিতে পথে নামলেন পড়ুয়ারা। গত বুধবার থেকে, করোনা উপেক্ষা করে শান্তিনিকেতন উপাসনা গৃ্হ সংলগ্ন তালধ্বজের সামনে বসেই বিক্ষোভে সামিল হলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি (Economics) বিভাগের দুই ছাত্র ফাল্গুনী পান ও সোমনাথ সৌকে তিনমাসের জন্য সাসপেন্ড করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, সময় পেরলেও সাসপেনশন এখনও জারি রয়েছে। এর জেরেই মূলত বিক্ষোভে পথে নেমেছেন পড়ুয়ারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের (Visva Bharati University) ছাত্র ফাল্গুনী পান-সহ অন্যান্য পড়ুয়াদের অভিযোগ, পাঠভবনের অধ্যাপিকা নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে কর্মসমিতির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অধ্যাপিকা বধিরুপা সিংহের নিয়োগ সঠিক পদ্ধতি মেনে হয়নি। নিয়োগে একাধিক বেনিয়ম ছিল। এমনই অভিযোগ তুলে বিশ্বভারতীর আচার্য প্রধানমন্ত্রী, পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি, এবং প্রধান তথা রাজ্যপাল-সহ উপাচার্য (Vice Chancellor) বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়েছিলেন অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। তারই ফলস্বরূপ তাঁকে সাসপেন্ড করা হয় বলে অভিযোগ। সাসপেন্ড কারণ হিসাবে বলা হয়, অধ্যাপক সুদীপ্তবাবু একটি অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই তা জনসমক্ষে এনেছেন। যার ফলে অধ্যাপিকার মানহানি হয়েছে।

এমনকী, সুদীপ্তবাবু যাতে বিভাগে না আসতে পারেন তাই তাঁর বিভাগীয় ঘরে তালাও লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পড়ুয়ারা এর প্রতিবাদ করলেও কোনও সুরাহা হয়নি। তারপরই ফাল্গুনী পান ও সোমনাথ সৌ দুই পড়ুয়া গিয়ে ওই বন্ধ ঘরের তালা ভাঙেন বলে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ অমান্য করার জন্য তাঁদেরকেও তিনমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু, তিনমাস পেরিয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে এলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, বিশ্ববিদ্য়ালয়ের তরফে ‘ভুয়ো মেইল’ করে সাসপেনশন (suspension) আরও তিনমাস বাড়ানো হয় বলে অভিযোগ। সেই মেইলে বিশ্বভারতীর অথোরাইজেশনের কোনও চিহ্ন নেই বলেই অভিযোগ করেছেন ফাল্গুনীরা।

পড়ুয়াদের একাংশ জানিয়েছেন, বিশ্বভারতীতে স্বৈরতন্ত্র চলছে। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ইচ্ছাকৃত পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলেছেন। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিতর্কের জন্য শিরোনামে এসেছেন। সম্প্রতি, গোপনে বসন্ত উৎসব পালন করে বিতর্কে জড়িয়েছিল বিশ্বভারতী। এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য শিরোনামে এসেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

উল্লেখ্য, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে অকারণে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে ইতিমধ্যেই পাশে দাঁড়িয়েছে দেশ ও রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা) (JUTA) বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের ভূমিকার বিরোধিতা করে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল সম্প্রতি। সেই প্রতিবাদ সভায় উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করেছিলেন জুটার সদস্যরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক স্যমন্তক দাস জানান, এই ধরনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। কোনও বিশ্ববিদ্যালয় এমন স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের উপর চলতে পারে না।

এ  বার ফের সেই সাসপেনশন  নিয়েই সরব পড়ুয়ারা। বুধবার থেকেই রাস্তায় বসে গান-বাজনার মাধ্য়মেই বিক্ষোভ জানাচ্ছেন তাঁরা। অবস্থানরত পড়ুয়ারা জানিয়েছেন, তাঁরা অবিলম্বে উপাচার্যের পদত্যাগ চান। প্রয়োজনে তাঁরা আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিয়ে গোটা বিষয়টি জানাবেন। যতক্ষণ না তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছে ততক্ষণ অবস্থান চলবে বলেই জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। যদিও, এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: ‘বিশ্বভারতীর উপাচার্য পাগল’, ভোট পেরলে দেখে নেওয়ার হুমকি কেষ্টর

Next Article