ইসলামাবাদ: বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) নয়া সংসদ ভবনে নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে উত্তাল ভারত। শেষ পর্যন্ত বড় কোনও বিপদ ঘটেনি, তবে, ঘটতেই পারত। এই ঘটনা অনেকেরই মনেই টাটকা করে দিয়েছে ২২ বছর আগের স্মৃতি। ২০০১-এর ১৩ ডিসেম্বর সংসদে হামলা চালিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠী। মৃত্যু হয়েছিল ৬ পুলিশ সদস্য, সংসদের এক নিরাপত্তাকর্মী এবং এক মালির। সেই নৃশংস হামলার পিছনের মূল মস্তিষ্ক, মাসুদ আজহার আলভি আজ কোথায়? ইসলামাবাদে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষার ছাতার তলায় নিশ্চিন্তে রয়েছেন সে। এমনকি, মাঝে মাঝে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে রেলওয়ে লিঙ্ক রোডে অবস্থিত তার মাদ্রাসা, মার্কাজ-এ-উসমান-ও-আলিতেও যায় সে।
২০০১ সালের সংসদ হামলার ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছিল দিল্লি পুলিশ। ২০১৬ সালে পাঠানকোটে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলায় প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পাঞ্জাব পুলিশও। তবে, শুধু এই দুই হামলাই নয়, ভারতে আরও বেশ কয়েকটি নাশকতার পিছনে হাত রয়েছে মাসুদ আজহারের। ২০০৫ সালের ৫ জুলাই, অযোধ্যার রাম জন্মভূমি মন্দিরে হামলা ২০১৯-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ বাহিনীর কনভয়ে হামলা, ২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বাল্ক প্রদেশের মাজার-এ-শরিফ শহরে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার নির্দেশও মাসুদ আজহারেরই দেওয়া বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
এক সময় আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন এবং তালেবান গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল এই মাসুদ আজহার। বরাবরই ভারতের প্রতি তার অসীম ঘৃণা ছিল। ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় কারাগারে বন্দি ছিল সে। কারাগারে থাকতে থাকতে তার ভারত বিরোধিতা আরও বেড়েছিল। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে গিয়েছিল তার অনুগামীরা। আরও দুই জঙ্গি নেতার সঙ্গে মাসুদ আজহারকেও মুক্তি দেওয়ার শর্ত আরোপ করেছিল অপহরণকারীরা। ছাড়া পেয়েই পাকিস্তানে গিয়ে ভারত ধ্বংসের ডাক দিয়েছিল সে। গঠন করেছিল জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠী। আর তারপরই হয়েছিল সংসদ ভবন হামলা।
যতবারই মাসুদ আজহার এবং তার অনুগামীরা ভারতে নাশকতা চালিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সংসদ হামলার চার দিনের মধ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে একত্রিত করেছিল। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিল তারা। আবার, ২০১৯-এ বালাকোটে জইশ জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালিয়ে, পুলওয়ামার হামলার প্রতিশোধ নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই সময়ও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পাক কর্তৃপক্ষ কোনওদিনই ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানর জন্য আজহারকে দায়ী করেনি। পরিবর্তে, তাকে সুরক্ষা দিয়েছে।
ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০০২ সালে মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে মনোনীত করেছিল পাকিস্তান সরকার। তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মুশাররফ জইশকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু, তারপরও আজহারকে রীতিমতো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের মতো সুরক্ষা দিয়ে থাকে পাকিস্তান। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে, জেনারেল মোশাররফের উপর পরপর দুটি হামলা চালিয়েছিল জইশ। তবে, মোশরফ দুই ক্ষেত্রেই বেঁচে গিয়েছিলেন। পাক সরকারের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে জইশ সেই সময় তাদের নাম বদলে করেছিল, ‘খুদ্দামুল ইসলাম’। বর্তমানে, পাকিস্তানের মাটি থেকে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির উপর নজর রয়েছে গোটা বিশ্বের। তার মধ্যেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং পাক গুপ্তচয় সংস্থা আইএসআই-এর সহায়তায় মাসুদ আজহার এবং তার জইশ-ই-মহম্মদ গোষ্ঠী জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়মিত নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে।