স্টকহোম: আফ্রিকার (Africa) এক দ্বীপে জন্মেছিলেন। তার পর ১২ বছরের ছেলেটা শরণার্থী (Refugee) হয়ে এসেছিল ইংল্যান্ডে। তাই শরণার্থী অর্থাৎ যারা নিজের জন্মস্থানের শিকড় উপড়ে দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে যায়, তাদের কষ্ট যন্ত্রণাই সারাজীবন নাড়া দিয়েছে তাঁকে। সেই গল্পই ফুটে উঠেছে তাঁর একের পর এক লেখনীতে। ২০২১- এ সাহিত্যে নোবেল (Nobel Prize In Literature) পেলেন তানজানিয়ান (Tanzania) বংশোদ্ভূত লেখক আব্দুল রাজাক গুরনাহ (Abdulrazak Gurnah)। তিনি তাঁর এই পুরস্কার আফ্রিকা ও আফ্রিকাবাসীকে উৎসর্গ করেছেন। বৃহস্পতিবার সেই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
দশটি উপন্যাস ও বহু ছোট গল্পের লেখক আব্দুল রাজাক গুরনাহ। ১৯৪-তে ‘প্যারাডাইস’ উপন্যাস লিখে ‘বুকার’ প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব আফ্রিকার কী পরিস্থিতি ছিল, তারই ছায়ায় লেখা এই উপন্যাস। তাঁর প্রতিটি লেখা জুড়ে থাকত শরণার্থীদের জীবন। এ দিন পুরস্কার প্রাপক হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর গুরনাহ বলেন, আমি এতটাই বিস্মিত যে শোনার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারিনি। আফ্রিকাবাসীকেই তাঁর এই পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন ৭৩ বছরের এই লেখক।
I dedicate this Nobel Prize to Africa and Africans and to all my readers. Thanks!
— Abdulrazak Gurnah (@GurnahAuthor) October 7, 2021
১৯৪৮ সালে তাঁর জন্ম হয় জাঞ্জিবারের এক দ্বীপে। ১৯৬০ সালে তিনি শরণার্থী হয়ে ইংল্যান্ডে চলে আসেন। ক্যান্টবেরির কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন তিনি। সেখান থেকেই অবসর নেন।
২১ বছর বয়স থেকেই লেখা শুরু করেছিলেন তিনি। ‘ডেসারশন’ তাঁর আরও একটি বিখ্যাত উপন্যাস। দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেই সেটি লিখেছিলেন তিনি। সেখানকার মানুষের জীবন ধারাকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ধারা ভেঙেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত লেখকের ‘প্যারাডাইস’ প্রবন্ধটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়। পূর্ব আফ্রিকার একাধিক জায়গা ঘুরে এসে এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: সম্পূর্ণ ৭০ শতাংশ টিকাকরণ, সিডনিতে উঠতে চলেছে ১০৬ দিনের লকডাউন
প্রায় ৩৫ বছর পর আরও এক আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গের হাতে উঠল সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার। এর আগে শেষবার ১৯৮৬ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন ওলে সোইনকা। গুরনাহ মনে করেন, তাঁর এই পুরস্কারের জন্যই আরও বেশি করে শরণার্থীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, আজও এটা এক জ্বলন্ত সমস্যা গোটা বিশ্ব জুড়ে। প্রত্যেকদিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে অথবা মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের উচিত এই সমস্যার মুখোমুখি হওয়া। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি যখন শরণার্থী ছিলেন তখন এই শব্দটা এত বেশি মারাত্মক ছিলনা। তিনি মনে করেন আজ শরণার্থীদের নিরাপত্তা অনেক কম। সন্ত্রাস অধ্যুষিত দেশ গুলি থেকে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।