ভিডিয়ো: বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে ‘জুজু’ তালিবান, তোয়াক্কা না করেই প্রতিবাদ আফগান মহিলাদের

যে সমস্ত মহিলারা আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে আসতে পেরেছেন, তাদেরও কাঁদতে কাদতে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, বাকি মহিলাদের নৃশংস অত্যাচারের শিকার হতে হবে, হয়তো বেঘোরেই প্রাণ হারাতে হবে। কাবুলিওয়ালাদের মা-বোনেরা এ বার জবাব দিচ্ছেন মুখেই।

ভিডিয়ো: বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে 'জুজু' তালিবান, তোয়াক্কা না করেই প্রতিবাদ আফগান মহিলাদের
সামনেই বন্দুকধারী, তবুও প্রতিবাদ থামেনি আফগান মহিলাদের।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 18, 2021 | 3:45 PM

কাবুল: ২০ বছর পর ফের শুরু হতে পারে বন্দিদশা, কিন্তু তা মানতে নারাজ আফগানিস্তানের কিছু সংখ্য়ক মহিলা। নিজেদের সমান অধিকার ছিনিয়ে নিতে তালিবানিদের বিরুদ্ধেই এ বার পথে নামল কাবুলের মহিলারা। যেখানে শরিয়া আইন এনে মহিলাদের গতিবিধিতে ফতেয়া জারি করা হচ্ছে, সেখানেই নিজেদের অধিকার কেড়ে নিতে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে পথে নেমেছেন মহিলারা। আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর এই প্রথম তালিবানদের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ হল এবং সেখানে নেতৃত্ব দিলেন মহিলারাই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, চারজন মহিলা হিজাব ও আবায়স পরে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। সামনেই তালিবান বাহিনী টহল দিলেও তারা একটুও দমে যাচ্ছেন না। অপর একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, সমান অধিকারের দাবি নিয়ে পথে নেমেছেন বহু মহিলা, তালিবানের বিরুদ্ধে তারা স্লোগানও দিচ্ছেন। হাতে অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন ওই মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে এলেও তারা আন্দোলন বা স্লোগান দেওয়া বন্ধ করেননি।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি যখন তালিবানদের দখলে ছিল আফগানিস্তান, তখনই চালু করা হয়েছিল শরিয়া আইন। সেখানে যেমন স্বামী বা রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, এমন পুরষসঙ্গী ছাড়া বেরোনোয় নিষেধাজ্ঞা ছিল, তেমনই শিক্ষা, চাকরি করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়। মার্কিন সেনা অভ্যুত্থানের পর আফগান সরকারের অধীনেই ধীরে ধীরে সেই অধিকার ফিরে পেয়েছিল আফগানিস্তানের মহিলারা। কিন্তু রবিবার এক লহমায় বদলে গেল সবকিছু।

কাবুলের দখল নেওয়ার পরই গোটা আফগানিস্তানই তালিবানের হাতের মুঠোয় চলে আসে। দেশজুড়ে ছড়ায় আতঙ্ক। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় কাবুল বিমানবন্দরে ঠাঁই নেন। সেখানে সেনাবাহিনীর বিমানেই কোনওমতে উঠে অজানা গন্তব্যে রওনা দেন। কিন্তু যারা পালাতে পারলেন না?

গতকালই সাংবাদিক বৈঠক করেন তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ। সেখানে তিনি বলেন, “বিদেশি শক্তিকে তাড়িয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। আমরা বদলার পথে হাঁটব না কোনও সংঘর্ষ চাই না আমরা। শীঘ্রই শক্তিশালী ইসলামিক তৈরি সরকার হবে। মহিলাদের সমস্ত অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সর্বত্র তাঁরা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। শরিয়ত আইনের অধীনে থেকেই মহিলারা সব কাজ করতে পারবেন।”

তবে অতীতের স্মৃতি ভোলেননি সে দেশের নাগরিকরা। তবে এ বার মুখ বুজে না থেকে প্রতিবাদেই সরব হয়েছেন মহিলারা। ছোট ছোট দলে ভেঙে কাবুলের বিভিন্ন পথে নেমেছেন তারা। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন সমান অধিকারের দাবিতে। আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পর এটিই তাদের বিরুদ্ধে প্রথম কোনও বিক্ষোেভ কর্মসূচি।

সম্প্রতিই আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা মেয়র জ়ারিফা ঘাফারি বলেছিলেন, “আমার স্বামীর সঙ্গে গোটা পরিবার অপেক্ষায় আছে কখন তারা আসবে। কখন আমাকে হত্যা করবে। জানি, কেউ সাহায্য করার নেই। আমি আমার পরিবারকে ছেড়ে কোথাও পালিয়েও যাব না। আর কোথাই বা যাবো?”

যে সমস্ত মহিলারা আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে আসতে পেরেছেন, তাদেরও কাঁদতে কাদতে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, বাকি মহিলাদের নৃশংস অত্যাচারের শিকার হতে হবে, হয়তো বেঘোরেই প্রাণ হারাতে হবে। তবে কাবুলিওয়ালাদের মা-বোনেরা এ বার ঘরবন্দি না থেকে, জবাব দিচ্ছেন মুখেই। আরও পড়ুন: মহিলাদের অধিকারের বুলিই সার, নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নেই হাসিতে ফেটে পড়ল তালিবানরা!