বার্লিন: ১৬ বছরের একছত্র রক্ষণশীল শাসনের অবসান। জার্মানির সাধারণ নির্বাচনে (German Election 2021) পরাজিত হল অ্যাঞ্জেলা মর্কেলের (Angela Merkel) কনজারভেটিভ পার্টি। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় মর্কেলের সরকারেই জোটসঙ্গী হিসেবে থাকা ওলাফ স্কুল্জের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এসডিপি) মাত্র দেড় শতাংশ ব্যবধানে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। অ্যাঞ্জেলা মর্কেলের দল শেষ পর্যন্ত ২৪.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে, এসডিপি-র ঝুলিতে এসেছে ২৫.৭ শতাংশ জনমত। মর্কেলের বিপরীতে থাকা ও জয়ী হওয়া দল এসপিডি মধ্য বামপন্থী দল হিসেবেই পরিচিত। অন্যদিকে, অ্যাঞ্জেলার দল পুরোপুরি রক্ষণশীল ভূমিকার জন্য খ্যাত।
অ্যাঞ্জেলার দল সিডিইউ ও জয়ী দল এসপিডি বাদে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি ও লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাট পার্টি। তারা পেয়েছে ১৪.০৬ ও ১১.০৫ শতাংশ ভোট। জার্মানির সংসদে মোট ৭৩৫ টি আসনের মধ্যে এসডিপি পেয়েছে ২০৬ টি আসন। অ্যাঞ্জেলার দল ১৯৬ টি আসনেই থমকে গিয়েছে। বাকি পরিবেশবাদী পার্টি ১১৮ টি আসন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এ বাদে ফ্রি ডেমোক্র্যাট পার্টির ঝুলিতে এসেছে ৯২ টি আসন।
২০০৫ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়লাভের পর অ্যাঞ্জেলার এই হার থেকে আন্তর্জাতিক মহলেরও একাধিক শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে। যদিও ২৫.৭ শতাংশ ভোট পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই এসডিপি কাদের সঙ্গে জোট করে, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ, অ্যাঞ্জেলা মর্কেল শুধুমাত্র জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন না। তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রথম ১০ জনের তালিকায় থাকা মানুষ। ফলে তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়া, এবং অন্য রুচির দলের প্রতি মানুষের আগ্রহ, ইউরোপের আগামী দিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বদল আনতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দীর্ঘ ১৬ বছরের নেতৃত্ব শেষে অ্যালেঞ্জা যে শাসকের আসন থেকে সরবেন সেটা জানাই ছিল। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভ করলে তাঁর পরিবর্তে যে আরমিন ল্যাসেটকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, সেই প্রার্থীকে নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের অন্দরেই। যে কারণে একটা বড় অংশের মানুষের আস্থা অ্যাঞ্জেলার দলের উপর থেকে সরে গিয়েছে বলে মনে করছেন সে দেশের রাজনীতির কারবারিরা। কোভিডের কাঁটাও যে অ্যাঞ্জেলাকে বিঁধে থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইউরোপের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি করোনা জার্মানিকেও নাজেহাল করেছিল। যা সরকার পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোভিড অতিমারির সময় অ্যাঞ্জেলার অতি-রক্ষণশীল নীতি সমালোচিত হয়েছিল নানা মহলে। বিশ্বের বৃহত্তম ওষুধ রফতানি করা এই দেশের কাছে থেকে যতটা উদার মানসিকতা আশা করা হয়েছিল, জার্মান চ্যান্সেলর সেটা দেখাতে পারেননি। নানা ওষুধ সংস্থার স্বত্ব অন্যান্য দেশকে দিতে, বা অন্যান্য দেশে কয়েকটি জীবনদায়ী ওষুধ প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিতে আপত্তি ছিল জার্মানির। সেই কঠোর নীতিকে আপন করে রাখাই ক্ষমতার হারানোর কারণ হল কিনা, সেই বিষয়টি বিবেচ্য হচ্ছে এই পরাজয়ের পর।
শেষ এক দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডানপন্থী এবং রক্ষণশীল প্রবৃত্তির রাজনৈতিক দলগুলিই বিশেষভাবে সাফল্যের মুখ দেখেছে। আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান থেকে ব্রাজিলের বোলসোনারো। জার্মানিও টানা তিনবার রক্ষণশীল শাসক অ্যাঞ্জেলাকেই বেছে নিয়েছে। কিন্তু নতুন দশকে পা রাখার পর থেকেই ডানপন্থা থেকে ফের জনমত ক্রমশ মধ্যবাম এবং উদারপন্থার দিকে ঝুঁকছে। যেমন আমেরিকায় ট্রাম্পকে সরিয়ে পুনরায় ডেমোক্র্যাটের উত্থান। একই ভাবে জার্মানিতেও মধ্য-বামপন্থী এই দলের সর্বোচ্চ জনমত। যা কিনা পশ্চিমে নতুন করে মধ্য-বামের উত্থানের স্পষ্ট ইঙ্গিত বয়ে আনছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Canada India Flights: ভারত থেকে সরাসরি বিমান যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার কানাডার
জার্মানির সাধারণ নির্বাচনে এসডিপি-র জয়ী হওয়া এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যপন্থার উদারমনস্ক দলগুলির জন্য ইতিবাচক সংকেত বয়ে আনতে পারে। কারণ গত এক দশকে কোনও শক্তিধর দেশই উদারপন্থী বা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আস্থাশীল শাসকের শাসন দেখেনি। কাজেই জার্মানির অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রীর পরাজয় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মানচিত্রেও অনেক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিল মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: Exclusive: ‘প্লিজ নামটি গোপন রাখুন, গর্ভের সন্তানকে খুন করে তালিবান, আমারও সন্তান আছে’