Lake Nyos disaster: মাত্র ২০ সেকেন্ড, কেড়ে নিল ৫০০০ বেশি প্রাণ! এক লহমায় কী ভাবে মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছিল গোটা গ্রাম?

Mar 25, 2025 | 5:23 PM

Lake Nyos disaster: কোনও বিমান হামলা বা বোমা হামলা হয়নি। ইনফ্যাক্ট সেই রাতে যা ঘটেছিল তাতে মানুষের কোনও হাতই ছিল না। বরং প্রকৃতির কাছে মানুষ যে কতটা অসহায় তাই প্রকট হয়েছিল আরও একবার। সেদিন মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রাণহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা।

Lake Nyos disaster: মাত্র ২০ সেকেন্ড, কেড়ে নিল ৫০০০ বেশি প্রাণ! এক লহমায় কী ভাবে মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছিল গোটা গ্রাম?
Image Credit source: THIERRY ORBAN/Sygma via Getty Images

Follow Us

৩৯ বছরের এক নিঝুম রাত। ততক্ষণে নিদ্রাচ্ছন্ন বেশিরভাগ মানুষই। হঠাৎ এক বিকট শব্দ। আর তারপরই যা ঘটে তা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি অনেকেই। কেড়ে নিয়েছিল ১,৪৭৬ জন মানুষের প্রাণ, মারা গিয়েছিল ৩৫০০ বেশি গবাদি পশু। কী হয়েছিল সেদিন?

না না কোনও বিমান হামলা বা বোমা হামলা হয়নি। ইনফ্যাক্ট সেই রাতে যা ঘটেছিল তাতে মানুষের কোনও হাতই ছিল না। বরং প্রকৃতির কাছে মানুষ যে কতটা অসহায় তাই প্রকট হয়েছিল আরও একবার। সেদিন মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রাণহীন হয়ে পড়েছিল প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা।

দিনটা ১৯৮৬ সালের ২১ অগস্ট। উত্তর-পশ্চিম ক্যামেরুনে লেক নিওসের দিক থেকে রাত ৯টা নাগাদ হঠাৎ ভেসে এক অদ্ভুত গর্জন। সেই আওয়াজের তীব্রতা এতই যেন কেঁপে উঠেছিল দিগন্ত। স্থানীয় কৃষক ইফ্রিয়াম চে, হ্রদের কাছে এক পাহাড়ি টিলায় মাটির বাড়িতে থাকতেন তিনি। কীসের শব্দ না বুঝে ফের শুয়ে পড়েন তিনি। পরের দিন সকালে উঠে জলাশয়ের দিকে গেলে দেখেন, গতকাল অবধি জলে টইটুম্বর ছিল তাই আজ শুকনো খটখট করছে। কী ভাবে এমনটা হল? তার থেকেও বড় ব্যপার, পশুপাখি-পোকামাকড় কারও কোনও শব্দ নেই।

বুকে খানিকটা অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে নিজের গ্রামের দিকে এগিয়ে যান ইফ্রিয়াম। সেই সময় এমন এক দৃশ্য তাঁর চোখে পড়ে যা দেখে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল ইফ্রিয়ামের। গ্রামের বাসিন্দা পেশায় পশুপালক হালিমা সুলে। বারবার ডাকার চেষ্টা করছেন ইফ্রিয়ামকে। তাঁর দু-চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। হালিমার চারপাশে পড়ে রয়েছে পরিবারের ৩১ সদস্যের মৃতদেহ। তার পাশেই পড়ে রয়েছে আরও ৪০০ গবাদি পশুর মরদেহ। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয়টা চোখে পড়ে আরেকটু কাছে যেতেই। মৃতদেহগুলির উপরে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বহু মাছিও।

সেই রাতে ওই গর্জনের পরে, হ্রদের চারপাশে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাই এক মুহূর্তে যেন পরিণত হয়েছিল হিমঘরে। হালিমার মতোই দশা হয়েছিল গোটা গ্রামের। স্থানীয় বাসিন্দা মনিকা লোম বিবিসিকে জানিয়েছিলেন তাঁদের ৫৬ জনের যৌথ পরিবার ছিল, কিন্তু এক রাতেই মৃত্যু হয় ৫৩ জনের। মনিকা জানান, তাঁর ঘুম যখন ভাঙে তিনি দাগেন বাঁ হাতে একটা পোড়া দাগ। সেই দাগ দেখলে মনে হবে হাতটা পচে গিয়েছে বোধহয়, তবে কোনও ব্যথা ছিল না।

চারপাশে একটাই ছবি, ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় বেশিরভাগ মানুষ থেকে গবাদি পশুর। এমন ঘটনা জানতে পেরেই ছুটে আসেন বিজ্ঞানীরা। দেখেন মৃতদেহগুলিতে রয়েছে কিছু অদ্ভুত ছোপ। গোটা এলাকায় পচা ডিমের উগ্র গন্ধ। যারা কপাল জোড়ে বেঁচে গিয়েছিলেন, তাঁরাও বমি, ডায়েরিয়া, হ্যালুসিনেশনের মতো সমস্যায় ভুগছিলেন। ভগবানের রোষ ভেবে গ্রাম ছাড়েন বেঁচে যাওয়া প্রায় সকলেই।

অবশেষে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পরে আসল কারণ আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। জানা যায় এই সব কিছুর পিছনে ছিল কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বিষক্রিয়া। কিন্তু কী ভাবে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ল কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস?

বিজ্ঞানীরা জানান, লেক নিওস তৈরি হয়েছিল আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট গর্তে। সেই গর্তেই সৃষ্টি হত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস। এই গ্যাস তখন নির্গমন হয় যখন জল বহমান হয়। তবে লেক নিওসের জল ছিল স্থির। তাই কয়েক দশক ধরে বাইরে বেরোতে পারেনি সেই গ্যাস।

যদিও কী ভাবে সেই গ্যাস বেরিয়ে এল তা জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা জানান, এর পিছনে ভূমিধ্বস বা বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। অনুমান প্রায় ২০ সেকেন্ডের মধ্যে ১.২ ঘন কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে গ্যাস। গ্যাস আশেপাশের বাতাসের তুলনায় খানিকটা ঘন, তাই উঁচু জমিতে যাঁদের বাস ছিল তারা বেঁচে যান।