ক্যালিফোর্নিয়া: গুগলের ‘এআই’ অর্থাৎ, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ (Google Artificial Intelligence) সংক্রান্ত গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেল চিনের কাছে! ফাঁস করল গুগলেরই এক প্রাক্তন কর্মী। ২০২৩ সালে, এক বছরেই পরভূত উন্নতি ঘটেছে এআই-এর। একই সময়ে এআই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভুল হাতে এই প্রযুক্তি চলে গেলে কিন্তু গুরুতর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এর জবাবে তথ্য়-প্রযুক্তি সংস্থাগুলি বলে, তারা তাদের এআই সংক্রান্ত সুরক্ষা নীতিগুলি নিয়মিত আপডেট করে। এআই-এর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। কিন্ত, গুগলের ঘটনা এআই সুরক্ষা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। গুগলের ওই প্রাক্তন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সংস্থার এআই সংক্রান্ত গোপন তথ্য চুরি করে সে, দুটি চিনা সংস্থার সঙ্গে ভাগ করেছিল। এর দায়ে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিয়েছে গুগল।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত কর্মীর নাম লিনওয়েই ডিং ওরফে লিওন ডিং। সে গুগলে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করত। ৩৮ বছরের লিওন, আদতে চিনা নাগরিক। কর্মসূত্রে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত গুগলের মূল সংস্থা ‘অ্যালফাবেটে’র কার্যালয় থেকে, সে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত গোপন বাণিজ্যিক নথি চুরি করেছে বলে অভিযোগ। গুগলের অভিযোগের ভিত্তিতে, বুধবার (৬ মার্চ) সকালে তাকে তার বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়। সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আদালত জানিয়েছে, সংস্থার গোপন বাণিজ্যিক নথি চুরির চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্রের খবর, গুগলের সুপারকম্পিউটিং ডেটা সেন্টারগুলির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সে চুরি করেছিল। সুপার কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ চিপ, সিস্টেম এবং সফ্টওয়্যার সম্পর্কে বিশদ তথ্য জোগার করেছিল সে। এই সেন্টারগুলিতেই গুগলের এআই মডেলগুলিকে মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আরও জানা গিয়েছে,২০১৯ সালে লিওনকে নিয়োগ করেছিল গুগল। তিন বছর পর থেকে সে এই গোপন নথিগুলি চুরি করা শুরু করেছিল। সেই সময় এক চিনা প্রযুক্তি সংস্থার প্রধান প্রযুক্তি কর্তা হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিল সে।
২০২৩-এর মে মাস নাগাদ, ৫০০টিরও বেশি গোপন ফাইল চুরি করেছিল লিওন। ওই মাসেই সে তার নিজের প্রযুক্তি কোম্পানি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এক চ্যাট গ্রুপে চুরি যাওয়া নথিগুলির একটি শেয়ার করে, সে দাবি করেছিল গুগলের দশ-হাজার-কার্ডের সুপার কম্পিউটশনাল পাওয়ার প্ল্যাটফর্ম তাঁর নখদর্পণে রয়েছে। চাইলেই তার প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে সে। এদিকে, গুগলও সে তথ্য চুরি করেছে বলে সন্দেহ করছিল। ২০২৩-এর ডিসেম্বরে গুগলের চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছইল লিওন। তার একদিন আগেই লিওনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় গুগল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার ল্যাপটপটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
গুগলের মুখপাত্র হোসে কাস্তানেদার দাবি, এই সকল তথ্য চুরি প্রতিরোধে তাদের কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই প্রাক্তন কর্মচারী, অসংখ্য নথি হাতিয়ে নিয়েছিল। তবে, গুগলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লিওনের ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং আড়াই লক্ষ মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তবে, যে তথ্যাদি সে ইতিমধ্য়েই চিনা সংস্থাকে দিয়ে দিয়েছে, তা ফেরানো যাবে কিনা, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। আর চিনা সংস্থাগুলির উপর সেই দেশের সরকরের কড়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কাজেই, চিনা সংস্থার কাছে কোনও তথ্য যাওয়া মানে চিন সরকারের হাতেই সেই তথ্য যাওয়া।