ঢাকা: বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৮ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন পুণ্ডরিক ধামের সভাপতি, চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীও। এই হিন্দু সন্ন্যাসীর অভিযোগ, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়ে তাঁরা যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সেই আন্দোলনের নেতৃত্বকে খতম করার উদ্দেশ্যেই এই মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহের এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে বাংলাদেশি হিন্দু সংগঠনগুলি। সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে, তাঁরা আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন। ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত ১৮ জনের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ২৫ অক্টোবর, চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় একটি সমাবেশ ডেকেছিল হিন্দু সংগঠনগুলি। সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চেয়ে উঁচুতে গেরুয়া পতাকা লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে, চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী-সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টি বা বিএনপি-র নেতা ফিরোজ খান। তবে সভার আয়োজকদের দাবি, ওই পতাকাটির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। তারা আরও অভিযোগ করেছে, যে পতাকাটিকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি একটি ইসলামপন্থী সংগঠনের পতাকা।
ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী দাবি করেছেন, হিন্দু সংগঠনগুলি আট দফা দাবিতে একটি বিশাল সমাবেশ করেছিল। সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নকারীদের বিচারের জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা সংক্রান্ত আইন আনা এবং সংখ্যালঘুদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রক প্রতিষ্ঠার মতো দাবি রয়েছে তাদের। সেই দাবিগুলিকে দমিয়ে দিতে, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। চিন্ময়কৃষ্ণ দাস বলেছেন, “রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি আমাদের আট দফা দাবির বিরুদ্ধে। এটা আন্দোলনের নেতৃত্বকে খতম করার চেষ্টা।”
তবে, ফিরোজ খানের পাশে দাঁড়ায়নি তার দল বিএনপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, তারেক রহমানের নির্দেশে ইতিমধ্যেই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁদের আন্দোলনকে সমর্থন করায় বিএনপি এবং জামাতে ইসলামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। তবে তিনি আরও বড় প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পিছনে রয়েছে একটা ছোট মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাদেরকে চিহ্নিত করে কেন শাস্তি দেওয়া হবে না? তিনি জানিয়েছেন, গত ৫৩ বছর ধরেই বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে হিন্দুরা। এমনকি আওয়ামি লিগও কোনও কাজ করেনি। সব দলই ক্ষমতায় থাকার সময়, কোনও না কোনোভাবে মৌলবাদীদের উৎসাহ দিয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, মহম্মদ ইউনুস আশ্বাস দিলেও, হিন্দু-বিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাঁর তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।