নিউইয়র্ক: মার্কিন মুলুকে বাংলা ভাষার জয়-জয়কার। এমনটা বলা যেতেই পারে। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট দেবে আমেরিকা। ভোট হবে নিউইয়র্কেও। নিউইয়র্ক শহরকে বলা হয় আমেরিকার মেল্টিং পয়েন্ট, অর্থাৎ, যেখানে সব ভাষা-ধর্ম-বর্ণের মানুষ মিলে মিশে যায়। অন্তত ২০০ ভাষাভাষির মানুষ থাকেন এই মার্কিন শহরে। এহেন নিউইয়র্কে, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালট পেপারে ইংরেজি ছাড়াও থাকছে আরও চারটি ভাষা। যার মধ্যে ভারতীয় ভাষাগুলির প্রতিনিধি রয়েছে একটিই – বাংলা। অর্থাৎ, কোনও বিদেশি ভাষা না জানা থাকলেও, শুধুমাত্র বাংলা ভাষা জানলেই কেউ নিউইয়র্কে বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট দিতে পারবেন। ভাষা তার বাধা হবে না।
নিউইয়র্ক সিটির বোর্ড অব ইলেকশনের কার্যনির্বাহী পরিচালক, মাইকেল জে রায়ান বলেছেন, “আমাদের ইংরেজি ছাড়াও আরও চারটি ভাষায় ব্যালট ছাপতে হয়েছে। চাইনিজ, স্প্যানিশ, কোরিয়ান এবং এশিয় ভাষা হিসেবে বাংলা।” কিন্তু, ব্যালটের ভাষা হিসেবে পাঁচটির মধ্যে বাংলাকে কেন বেছে নেওয়া হল? রায়ান বলেছেন, “ভারতের অনেকগুলি ভিন্ন ভিন্ন ভাষা রয়েছে। ব্যালটে কী কী ভাষা থাকবে, সেই বিষয়ে একটি মামলা হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যার কাছে এই মামলার নিষ্পত্তির জন্য একটি এশীয় ভারতীয় ভাষা থাকা প্রয়োজন ছিল। আলাপ-আলোচনা করে তারা বাংলা ভাষাকে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আমি জানি শুধু বাংলা ভাষা রাখার সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু, মামলা থেকেই এটা উঠে এসেছে।”
তবে, নিউইয়র্কে ব্য়ালট পেপারে বাংলা ভাষা এর আগেই স্থান পেয়েছিল। ২০১৩ সালে প্রথমবার কুইন্স এলাকায় বাংলায় অনুবাদ করা ব্যালট জারি করা হয়েছিল। তার প্রায় বছর দুই আগে, মার্কিন সরকার ১৯৬৫ সালের ভোটাধিকার আইনের এক বিধানের অধীনে, দক্ষিণ এশীয় সংখ্যালঘুদের ভাষা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিল। নিউইয়র্কের বাংলাভাষী জনসংখ্যার মধ্যে যেমন ভারতীয়রা আছেন, তেমনই আছেন বাংলাদেশীরাও। ব্যালটে বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তি, বাংলাভাষীদের ভোট দিতে বাড়তি উৎসাহ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কের সকল ভারতীয়র কথ্য ভাষার প্রতিনিধি বাংলা না হলেও, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ডা. অবিনাশ গুপ্তর মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালটে বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তি সামগ্রিকভাবে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সহায়ক হবে। তিনি বলেছেন, “এতে ভারতীয় জনগণ ঘর থেকে বেরিয়ে ভোট দিতে উৎসাহিত হবে। এভাবেই আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে পারব। আমদের জনসংখ্যা বিশাল। ভারতীয়রা যেভাবে ঘরের বাইরে এসে ভোট দেয়, এমনকি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তা দেখে খুব আনন্দ হয়।”
টাইমস স্কোয়ারের এক দোকানে সেলস এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন মার্কিন-বাঙালি শুভাশীষ। ব্যালটে বাংলা থাকবে বলে তিনি খুশি। তিনি বলেছেন, “আমার মতো অনেকেই ইংরেজি জানে। কিন্তু, আমাদের সম্প্রদায়ে অনেকেই আছে যারা মাতৃভাষায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এটা তাদের মতো লোকদের ভোটকেন্দ্রে সহায়তা করবে। আমি নিশ্চিত যে আমার বাবাও বাংলা ব্যালটেই ভোট দেবেন।”