ঢাকা: ফের তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতকে একপ্রকার হুঁশিয়ারি দিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জলসম্পদ উপদেষ্টা, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সংবাদ সংস্থ পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কার্যত তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা ১৩ বছর পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে এই বিষয়ে তারা ফের আলোচনা শুরু করতে চায়। কিন্তু, ভারতের উচিত জল বন্টনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক নীতি মেনে চলা।
অবশ্য, তিস্তা এবং অন্যান্য নদীর জল-বন্টন চুক্তিগুলির ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই সমাধান করা যাবে বলে আত্মবিশ্বাসী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। কিন্তু, তা যদি না হয়, তাহলেই ঢাকা আন্তর্জাতিক আইনি নথি এবং নীতিগুলির কথা বিবেচনা করবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “আমি তিস্তার জল বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সকল স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তিস্তা চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু করতে হবে। দুই বছরের মধ্যে শেষ হবে গঙ্গা চুক্তিও। আমাদের সেটা নিয়েও কাজ করতে হবে।”
তিস্তার জল বণ্টন চুক্তির খসড়া তৈরি হয়ে যাওয়ার পরও, তা না হওয়ার জন্য তিনি সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মমতার বিরোধিতার কারণেই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। তাই, সেই খসড়া থেকেই ফের আলোচনা শুরু করতে চাইছে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন। সেই সময় ভারত ও বাংলাদেশ তিস্তার জল বণ্টনের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে পুরোপুরি তৈরি ছিল। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সেটা হলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জল পাবে না। তাই তিনি সেই খসড়া চুক্তিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেছিলেন।
তারপর, তিস্তা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। চলতি বছরে চতুর্থবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতে এসে তিস্তা নিয়ে নয়া দিল্লির সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন শেখ হাসিনা। জল বন্টন নিয়ে কোনও কথা না হলেও, তিস্তায় জল কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছিল দুই পক্ষ। সৈয়দার কথায় স্পষ্ট, সেই সব আলোচনাকে কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না বর্তমান সরকার। ফের একবার তারা এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,“আমরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব। এটি একটি আন্তর্জাতিক জল সমস্যা। কতটা জল পাওয়া যায় এবং তা পর্যাপ্ত কিনা তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট। তবে খুব কম জল পাওয়া গেলেও, আন্তর্জাতিক ভাগাভাগি নিয়মের কারণে বাংলাদেশে জলের প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।” ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা-সহ মোট ৫৪টি নদী বয়ে গিয়েছে। অথচ, দুই দেশের মধ্যে জল বন্টন নিয়ে মাত্র ৮টি চুক্তি রয়েছে। এতে বিস্মিত বাংলাদেশের জলসম্পদ উপদেষ্টা।