ঢাকা: কেনাবেচা হচ্ছে সাধারণ মানুষের আঙুলের ছাপ। সেই আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে তোলা হচ্ছে নতুন সিমকার্ড। সেই সিমকার্ডগুলি আবার বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। সেই সিমগুলি ব্যবহার করে ঘটানো হচ্ছে গুরুতর অপরাধ। আর সেই অপরাধের তদন্তে নেমে, পুলিশ যখন সেই সিমকার্ড ট্র্যাক করছে, তখন তারা গিয়ে পৌঁছচ্ছে গোবেচারা সাধারণ মানুষদের কাছে। অপরাধীদের আর খোঁজ মিলছে না। অন্তত বছর দুয়েক ধরে বাংলাদেশে চলছিল এই চক্র। গত মাসে ফেসবুকে দেওয়া এক বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে, আঙুলের ছাপ চুরির এই চক্রকে শনাক্ত করেছে বাংলাদেশি পুলিশ। এখনও পর্যন্ত এই চক্রের পান্ডা-সহ মোট আটজনকে গ্রেফতার করতে পেরেছে বাংলাদেশি পুলিশ।
পুলিশের দাবি, নতুন সিম কিনতে এবং পুরোনো সিমের পরিবর্তে নতুন সিম নিতে আসা মানুষদের আঙুলের ছাপ কৌশলে চুরি করত এই চক্র। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রথমে একবার কোনও গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নেওয়া হত। তারপর তাকে বলা হত, তাঁর আঙুল পরিষ্কার ছিল না। তাই, আবার ছাপ নিতে হবে। দ্বিতীয় ছাপটি নেওয়া হতো একটি ভিন্ন যন্ত্রে। তাতে ইনস্টল করা থাকত চক্রের সদস্যদের একটি নিজস্ব অ্যাপ। ওই অ্যাপ ব্যবহার করে আঙুলের ছাপ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ করা হতো। পরে ওই ব্যক্তির অজান্তেই তাঁর নামে সিম সংগ্রহ করে তা অপরাধীদের কাছে বিক্রি করা হত। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রক সিম কেনাবেচার ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ দেওয়া, অর্থাৎ, বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করেছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে নতুন সিম কিনতে বা পুরোনো সিম বদলাতে আঙুলের ছাপ, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং এক কপি ছবি লাগে।
দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্র বাংলাদেশে সক্রিয় ছিল। কিন্তু, গত মাসে ফেসবুকে তারা একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। সিম বায়োমেট্রিক, কললিস্ট ও মোবাইলে আর্থিক সেবাদান প্রতিষ্ঠানের তথ্য সরবরাহ করা হয় বলে জানানো হয়েছিল সেই বিজ্ঞাপনে। ওই বিজ্ঞাপনটির সূত্র ধরেই এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। ১১ সেপ্টেম্বর, ঢাকা, কুড়িগ্রাম ও রংপুরে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে অন্তত আটশ জন সাধারণ মানুষের আঙুলের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। মহম্মদ মাসুদ নামে ২২ বছরের এক যুবক এই চক্রের মাথা বলে জানা গিয়েছে। পড়াশোনা শেষ করে সে একটি মোবাইল অপারেটরের সংস্থায় চাকরি নিয়েছিল। সেখানেই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে হাত পাকায় সে। সঙ্গে জুটে গয়েছিল এমন কিছু সঙ্গী, যারা অ্যাপ ও সফটওয়্যার তৈরি করতে পারে। চক্রের বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন দায়িত্ব ছিল।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের ব্যবস্থা চালুর পর বাংলাদেশে সিম-সংক্রান্ত জালিয়াতির ঘটনা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। তবে, এখন আবার নতুন উপায়ে এই জালিয়াতি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে এখন কোনও ব্যক্তির নামে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করা যায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, এই সংখ্যা পাঁচটিতে নামিয়ে আনার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।