Tagore Sculpture Controversy: ‘লজ্জায়’ হেঁট রবির মস্তক! চুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গর্জে উঠলেন ওপার বাংলার বুদ্ধিজীবীরা

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Feb 23, 2023 | 2:09 PM

Tagore Sculpture Controversy: রবীন্দ্রনাথের অপমান নিয়ে কোনও হেলদোল নেই ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের? হাসিনা সরকারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে, রবীন্দ্রনাথের অবমাননায় গর্জে উঠলেন ওপার বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একাংশ।

Tagore Sculpture Controversy: লজ্জায় হেঁট রবির মস্তক! চুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গর্জে উঠলেন ওপার বাংলার বুদ্ধিজীবীরা
রবীন্দ্রনাথের অপমান, গর্জে উঠল বাংলাদেশ

Follow Us

ঢাকা: ঘটনার পর এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে বইমেলার প্রবেশপথে সেন্সরশিপের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অস্থায়ী ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। একদিন পরই রাতের অন্ধকারে সেই ভাষ্কর্য সরিয়ে নেওয়া হয়। জঞ্জালের মধ্যে দেখা গিয়েছিল রবীন্দ্র-মূর্তির মাথা পড়ে থাকতে। তারপর, সেই ভাষ্কর্য ফের সেখানে পুনঃস্থাপন করা হলেও, রবীন্দ্রনাথের মূর্তির মাথাটি বামদিকে ঝুঁকে রয়েছে। অবনত অবস্থায় রয়েছে। যা দৃশ্যত অপমানজনক বলে মনে করছেন রবীন্দ্র অনুরাগীরা। সেই ঘটনার পর থেকে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রবীন্দ্রনাথের অপমান নিয়ে কি কোনও হেলদোল নেই ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের? হাসিনা সরকারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে, রবীন্দ্রনাথের অবমাননায় গর্জে উঠলেন ওপার বাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একাংশ।

রবীন্দ্রনাথের মূর্তি সরিয়ে নেওয়ার যুক্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কোনও ভাষ্কর্য স্থাপন করতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। সেই অনুমতি ছিল না বলেই মূর্তিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের লেখক মুম রহমান জানিয়েছেন মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী হিসেবে কোনও শিল্পকর্মে আপত্তি জানানোর পক্ষে যেমন তিনি নন, তেমনই অন্য কারোর জায়গায় তার অনুমতি না নিয়ে কিছু করারও পক্ষেও তিনি নন। এই ক্ষেত্রে এই দুই বিপক্ষিক ঘটনাই একসঙ্গে ঘটেছে। তবে, মূর্তি সরানোর চরম বিরোধিতা করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক রাজু আলাউদ্দিন। তিনি বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয় তো প্রতিবাদ জানানোরও জায়গা। তাই আমার প্রশ্ন, যদি সেটা ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদের ভাষা হয়, তাহলে, ভাষ্কর্য স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি কেন লাগবে?” মুক্তমনা লেখক স্বকৃত নোমানের মতে, “রবীন্দ্রনাথের মূর্তি স্থাপন, একটা নান্দনিক প্রতিবাদ ছিল। রাতের অন্ধকারে সেটাকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়াটা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক। ভাষ্কর্য দিয়ে যে প্রতিবাদ করা হয়েছিল, তার প্রতিবাদ আরও একটা ভাষ্কর্য দিয়ে করা যেত।”

কে বা কারা রবীন্দ্রনাথের মূর্তিটি ভাঙচুর করেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অনেকে অভিযোগ করছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কমিটির হাত রয়েছে এর পিছনে। আসলে, বাংলাদেশের মূলধারার অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাটি সেভাবে জায়গা পায়নি। এর পিছনেও কি সেন্সরশিপ রয়েছে?  স্বকৃত নোমান স্পষ্ট বলেছেন, “বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা, মুক্তমত প্রকাশের ক্ষেত্রে একটু রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা আছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সরকার।” আর এই সেন্সরশিপের প্রতিবাদ হিসেবে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি স্থাপন অত্যন্ত উপযুক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন লেখক রাজু আলাউদ্দিনও। তিনি বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ তো শুধুমাত্র একজন লেখক নন, একইসঙ্গে তিনি আমাদের মুক্তি এবং প্রতিবাদেরও ভাষা। সেই কারণেই রবীন্দ্রনাথের মূর্তিটি স্থাপন করাকে আমি সমর্থন করি।” সেই মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করার জন্যই, এমনটাই মনে করছেন কথা সাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। তিনি বলেছেন, “প্রতিবাদের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দিলে কিন্তু সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সরকার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।”

তবে, শুধু যে প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করতেই রবীন্দ্রনাথের মূর্তি এভাবে রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হয়েছে, তা নাও হতে পারে। বস্তুত বাংলাদেশের মুক্তমনা সাহিত্যিকদের অনেকেই মনে করছেন, এর পিছনে বাংলাদেশের চরমপন্থীদের মূর্তি-বিরোধিতা, এমনকি রবীন্দ্র-বিরোধিতার প্রবণতাও থাকতে পারে। একদিকে, লেখক মুম রহমান বলেছেন, “ভাষ্কর্যের ক্ষেত্রে আমাদের অ্যালার্জি আছে। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে ভাষ্কর্য নিয়ে আমাদের ধর্মীয় অ্যালার্জি আছে।” অন্যদিকে, রাজু আলাউদ্দিন বলেছেন, “যারা রবীন্দ্র বিদ্বেষী, এটা তাদেরই কাজ। বাংলাদেশে রবীন্দ্র বিরোধিতার ঐতিহ্য তো অনেক পুরনো।” তবে এই রবীন্দ্র বিরোধিতার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে স্থাপন করার ঐতিহ্যও বাংলাদেশে অনেক পুরনো বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর মতে রবীন্দ্র-বিরোধিতার শুরু থেকে রবীন্দ্রনাথের পক্ষে লড়াই হয়েছে, সেই লড়াইয়ে রবীন্দ্র অনুরাগীদেরই জয় হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ভেঙে ফেলা মূর্তি পুনঃস্থাপন সেই জয়েরই প্রতীক বলে মনে করছেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা।

রাজু আলাউদ্দিন বলেছেন, “একটা রাষ্ট্রে সবাই একই মতাদর্শের হয় না। রবীন্দ্রনাথের এই অপমান কোনও বড় বিষয় হিসেবে নেওয়া উচিত নয়। এটা কতিপয় দুর্বৃত্তের কাজ। বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আবেগের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির লড়াইয়ের হাতিয়ার এবং আনন্দের সঙ্গী। মুম রহমান আবার মনে করেন এই পুরো ঘটনাটির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সার্বিক চিত্রটা ধরা পড়েছে। তাঁর মতে, রবীন্দ্রনাথের মাথাটি যে আবার এনে বসানো হয়েছে, এতেই এই প্রতিবাদ সফল। তিনি বলেছেন, “যিনি ভাষ্কর্য স্থাপন করেছেন, যিনি ভেঙেছেন, যিনি পুনঃস্থাপন করেছেন, এরা সকলে আমাদেরই প্রতিনিধি। এটাই বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র। পুরো ঘটনাটা বিশ্লেষণ করলে আমাদের সকলের মানসিক চরিত্রের ভালো মন্দ বেরিয়ে আসে। একটা সমাজে তো সবাই একরকম নয়। ধর্মীয় গোঁড়ামিও আছে, আবার মুক্তমনাও আছে। কিছু কিছু বিরল ঘটনা ঘটে, যেখানে দুই পক্ষের চরিত্রটাই দেখা যায়।”

এরপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রবীন্দ্রনাথের মূর্তির মাথা ভেঙে আবর্জনার মধ্যে পড়ে থাকল, এই দুর্ভাগ্যজনক চিত্রের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনও ক্ষমা প্রার্থনা বা বিবৃতি না প্রকাশ করাটা বিস্ময়কর। রাজু আলাউদ্দিনের মতে, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানের দিক থেকে, প্রতিবাদের জায়গা থেকে, প্রগতিশীলতার দিক এতটাই পিছিয়ে পড়েছে, তাদের কাছ থেকে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। তবে এই নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ রবীন্দ্রনাথ চির উন্নত শির, তাঁর সেই ছবিই সকলের মনে ধরা আছে।”

Next Article