ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের অর্থনীতির হাল নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর্থিক সাহায্যের জন্য এখন অন্যান্য দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির কাছে হাত পাতছে পাক সরকার। বছর দুয়েক আগে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ আক্ষেপ করেছিলেন, “আজ যখন আমরা যখনই কোনও মিত্র দেশে যাই বা তাদের রাষ্ট্রপ্রধানকে ফোন করি, তখন তারা মনে করে আমরা টাকা ভিক্ষা চাইছি।” পাকিস্তান সরকার যখন ভিক্ষার বাটি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন ভিক্ষাবৃত্তি পাকিস্তানের এক বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানের ছোট-বড় সব শহরে সংগঠিত আকারে শুরু হয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। শুধু তাই নয়, এখন অন্যান্য দেশে ভিক্ষুক রপ্তানিও শুরু করেছে ইসলামাবাদ।
পাক সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, সম্প্রতি সেই দেশের সরকার দুই হাজারেরও বেশি ভিক্ষুকের পাসপোর্ট, সাত বছরের জন্য ব্লক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব দালালদের ধরে এই ভিক্ষুকরা বিদেশে যায়, তাদের পাসপোর্টও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাক সরকার। প্রধানত সৌদি আরব, ইরান এবং ইরাকে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি চালায় পাকিস্তানি ভিক্ষুকরা। এতে এই সমস্ত দেশে তাদের কুখ্যাতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার। তাই ভিক্ষাবৃত্তির ব্যবসায় লাগাম টানতে চাইছে তারা। গত বছর পাক সেনেটে এক অদ্ভূত তথ্য এসেছিল।
জানা গিয়েছিল, বিদেশে গ্রেফতার হওয়া ৯০ শতাংশ ভিক্ষুকই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। শুধু ভিক্ষুক নয়, এই সব দেশে পাড়ি দিচ্ছে পাক পকেটমাররাও। এই নিয়ে পাক সরকারের কাছে অভিযোগও করেছে এই দেশগুলি। সৌদি আরব, ইরান এবং ইরাকে যাওয়ার জন্য যে বিশেষ তীর্থযাত্রী ভিসা দেওয়া হয়, সেই ভিসা নিয়েই পাক ভিক্ষুকরা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। এই ভিক্ষুক ও পকেটমারদের নয়া গন্তব্য হয়েছে জাপান, তাও জানা গিয়েছিল। একে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগও উঠছে।
পাকিস্তানের মধ্যেও ভিক্ষাবৃত্তি এখন এক বড় সংগঠিত ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। চাকরির নেই, সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষকে ভিক্ষাবৃত্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। ২৩ কোটি জনসংখ্যার দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যাই ৩ কোটি ৮০ লক্ষ। কেন বলা হচ্ছে এটা বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে? করাচিতে ভিক্ষুকদের দৈনিক গড় আয় ২,০০০ টাকা, লাহোরে ১,৪০০ টাকা, ইসলামাবাদে ৯৫০ টাকা। মাস কয়েক আগে পাক সরকার জানিয়েছিল, তাদের দেশে ভিক্ষুকের জাতীয় গড় আয় ৮৫০ টাকা।
গত বছর পাকিস্তান ট্রিবিউনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, করাচিতে ১ লক্ষ ৩০ হজারের বেশি ভিক্ষুক রয়েছে। প্রতি বছর রমজানের আগে অন্যান্য শহর থেকে আরও ৩ লক্ষ ভিক্ষুক এসে জড়ো হয় সেখানে। লাভজনক জায়গা নিয়ে ভিক্ষুকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। চলতি বছরের এপ্রিলে, করাচিতে চার ভিক্ষুকের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এফআইআর করেছিল আরেক ভিক্ষুক।