Gold Reserves: সত্যিই সত্যিকারের এল ডোরাডো? বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ ভাণ্ডার এখানেই?

Gold Reserves: নক্স দুর্গের পুরো চত্ত্বর স্টিলের বেড়া দিয়ে ঘেরা। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে রয়েছে বৈদ্যুতিন অ্যালার্ম। পুরু গ্রানাইটের দেওয়াল ইস্পাতের পাত দিয়ে মোড়া। যে দেওয়াল ভাঙার ক্ষমতা নেই অতি শক্তিশালী বোমারও। সেনাকর্মীরা ছাড়া এখনও পর্যন্ত আমেরিকার হাতে গোণা সামান্য কয়েকজন মানুষ এখানে পা রাখার সুযোগ পেয়েছেন।

Gold Reserves: সত্যিই সত্যিকারের এল ডোরাডো? বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ ভাণ্ডার এখানেই?
কী বলছে ইতিহাস? Image Credit source: Facebook
Follow Us:
| Updated on: Nov 05, 2024 | 8:52 PM

১৯৬৪ সালে রিলিজ হয়েছিল বন্ড সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘গোল্ডফিঙ্গার’। জেমস বন্ডের ভূমিকায় ছিলেন শঁ কোনেরি। ছবিতে বন্ডের ওপর দায়িত্ব ছিল ফোর্ট নক্স থেকে সোনা চুরি আটকানো। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ আমেরিকার সরকারি স্বর্ণভাণ্ডার রাখা আছে ফোর্ট নক্সে। ফোর্ট নক্স বা নক্স দুর্গ আজও রহস্যে ঘেরা। একে নিয়ে যা সব শোনা যায় তার কোনটা সত্যি আর কোনটা শুধুই মিথ, সেটাও বলা কঠিন। ফোর্ট নক্সে কতো সোনা আছে বা আদৌ এখনও আছে কিনা, সেও এক রহস্য। তবে, একটা বিষয়ে প্রায় সকলেই একমত। বিশ্বের দুর্ভেদ্যতম জায়গার নাম ফোর্ট নক্স। বন্ড কী আর যেখানে সেখানে যায়!

আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বে কেন্টাকি প্রদেশে রয়েছে নক্স দুর্গ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৮ সালে এখানে অস্থায়ী সেনা ঘাঁটি হিসাবে ক্যাম্প নক্স তৈরি করা হয়। জর্জ ওয়াশিংটনের সময় প্রথম মার্কিন যুদ্ধসচিব হেনরি নক্সের নামে এই সেনাঘাঁটির নামকরণ করা হয়। পরে ১৯৩২ সালে ক্যাম্প নক্সকে স্থায়ী সামরিক ঘাঁটির চেহারা দেওয়া হয়।

নক্স দুর্গের পুরো চত্ত্বর স্টিলের বেড়া দিয়ে ঘেরা। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে রয়েছে বৈদ্যুতিন অ্যালার্ম। পুরু গ্রানাইটের দেওয়াল ইস্পাতের পাত দিয়ে মোড়া। যে দেওয়াল ভাঙার ক্ষমতা নেই অতি শক্তিশালী বোমারও। সেনাকর্মীরা ছাড়া এখনও পর্যন্ত আমেরিকার হাতে গোণা সামান্য কয়েকজন মানুষ এখানে পা রাখার সুযোগ পেয়েছেন। ১৯৪৩ সালে ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফোর্ট নক্সের স্বর্ণভাণ্ডার দেখতে গিয়েছিলেন।

ট্রেনে করে টন টন সোনা পাঠানো হয় 

১৯৩৫ সাল। জার্মানিতে তখন শুরু হয়ে গিয়েছে হিটলারি শাসন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ ঘণ্টা বাজতে শুরু করে দিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের মনে হয় দেশের সব সোনা একটা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে ফেলা দরকার। চারদিক পাহাড়ে ঘেরা থাকায় আর সেনাঘাঁটি থাকায় সোনা রাখার জায়গা হিসাবে নক্স দুর্গকেই বেছে নেওয়া হয়। ১৯৩৭ সালে গোটা আমেরিকা থেকে ট্রেনে করে টন টন সোনা সেখানে পাঠানো হয় বলে জানা যায়। পরে, আরও সোনা জমতে জমতে সোনার পাহাড়ে পরিণত হয় ফোর্ট নক্স।

১৯৭৩ সালে মার্কিন সরকার জানায় নক্স দুর্গে ৪৫ লক্ষ কেজি সোনা আছে। মজুত থাকা সেই ৪৫ লক্ষ কেজি সোনার দাম এখন প্রায় ২৩ লক্ষ কোটি টাকা। পরে আরও কত সোনা মজুত করা হয়, এ নিয়ে সরকারি তথ্য প্রকাশ্যে নেই। শুধু সোনা নয়। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি থেকে অন্যান্য মূল্যবান জিনিসও সময়ে সময়ে নক্স দুর্গে নিয়ে গিয়ে রাখে মার্কিন সরকার। যেমন জাপান পার্লহারবার আক্রমণ করার পর ওয়াশিংটন থেকে সব জরুরি সরকারি নথি পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফোর্ট নক্সে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে সেসব আবার রাজধানীতে ফিরিয়ে আনা হয়। আবার ঠান্ডা যুদ্ধের সময় টন টন ব্যথার ওষুধ মরফিন সালফেট ফোর্ট নক্সে মজুত করে রাখে মার্কিন সরকার। কারণ তারা ভয় পেয়েছিল যে এই ওষুধ তৈরি  করার কাঁচামাল আমেরিকায় ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

কনস্পিরেসি থিওরি ?

আমেরিকার চাঁদে পা রাখার পাল্টা যেমন মুন হোক্স থিয়োরি রয়েছে। তেমনই নক্স দুর্গের সোনা নিয়েও ওদেশে নানারকম কনস্পিরেসি থিওরি চালু আছে। তাতে কখনও বলা হয় মার্কিন সরকার আদৌ নক্স দুর্গে সোনা পাঠায়নি। পাঠানো হয় সোনার মত দেখতে টাংস্টেন বার। কখনও বা আবার দাবি করা হয় নক্স দুর্গের সোনা সব গোপনে বেচে দিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রশাসন এসবের জবাব দিতেও কখনও মুখ খোলেনি। তবে ২০১৭ সালে ফোর্ট নক্স ঘুরে এসে আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভ মুনচিন শেষবার জানান নক্স দুর্গের সোনা যেমন ছিল তেমনই আছে। সুরক্ষিত আছে। যদিও, কত সোনা তা তিনি জানাননি।