US Election 2024: কমলা জিতলে পৌষমাস, ট্রাম্প হলে সর্বনাশ! সরু সুতোয় দুলছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
US Election 2024: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, শফিকুল আলমের মতে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, দুই দলের পদস্থ নেতাদের সঙ্গেই ড. মহম্মদ ইউনুসের সম্পর্ক ভাল। তাই, এই নির্বাচনের ফলাফলের কোনও প্রভাব বাংলাদেশের উপর পড়বে না। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের অনেকেরই দাবি, কমলা হ্যারিস জিতলে ভাল, ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশের কপালে দুঃখ আছে।
শুরু হয়ে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাটনের ভোট গ্রহণ। গোটা বিশ্বর চোখ এখন সেদিকেই। বিশ্বের সবথেকে শক্তিধর দেশের ক্ষমতা কমলা হ্যারিস না ডোনাল্ড ট্রাম্প – কার হাতে যায়, তার উপর বিশ্বের বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক ঘটনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ডামাডোলে ডুবে থাকা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্যও, মার্কিন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, শফিকুল আলমের মতে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট, দুই দলের পদস্থ নেতাদের সঙ্গেই ড. মহম্মদ ইউনুসের সম্পর্ক ভাল। তাই, এই নির্বাচনের ফলাফলের কোনও প্রভাব বাংলাদেশের উপর পড়বে না। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের অনেকেরই দাবি, কমলা হ্যারিস জিতলে ভাল, ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশের কপালে দুঃখ আছে।
হিন্দুদের পক্ষে ট্রাম্পের টুইট
বিশেষ করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা রিপাবলিকার প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সাম্প্রতিক টুইট এই মতকে জোরালো করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, “আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর হিংসার তীব্র নিন্দা জানাই। তাদের আক্রমণ করেছে উন্মত্ত জনতা, লুঠপাট করেছে। সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমি ক্ষমতায় থাকলে এটা ঘটত না। কমলা (কমলা হ্যারিল) এবং জো (জো বাইডেন) সারা বিশ্বের এবং আমেরিকার হিন্দুদের উপেক্ষা করেছে। ইসরায়েল থেকে ইউক্রেন, এমনকি আমাদের দক্ষিণ সীমান্তেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। কিন্তু, আমরা আমেরিকাকে আবার শক্তিশালী করব এবং শক্তির মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনব!”
স্পষ্টতই, মার্কিন হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবেই ট্রাম্প এই টুইট করেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি, কিছু ‘লবি গ্রুপ’-এর সম্ভবত প্রভাব খাটিয়ে ট্রাম্পকে দিয়ে এই টুইট করিয়েছে। লবি গ্রুপ বলতে তিনি সম্ভবত আওয়ামি লিগ অথবা ভারত সরকারকে বোঝাতে চেয়েছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই টুইট থেকে তাঁর ভবিষ্যৎ নীতিরও ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। আর সেটা বাংলাদেশের পক্ষে ভাল খবর নয়। গত অগস্ট মাসে, হাসিনার বিদায়ের পরপরই, জো বাইডেনকে ফোন করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তবে, তাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্পের মতো কোনও জোরালো বিবৃতি দেননি বাইডেন। কমলা হ্যারিসের সময়েও ডেমোক্র্যাট শিবিরের এই অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে, ট্রাম্পের টুইট থেকে স্পষ্ট, তাঁর প্রশাসন অন্তত বাইডেনের সময়ের মতো চোখ বন্ধ করে থাকবে না।
বন্ধ হয়ে যাবে সহায়তা?
দেশ পুনর্গঠনের জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার। পালা বদলের পর ঢাকায় এসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও উন্নয়নে সহায়তার পাশাপাশি, অতিরিক্ত ২০ কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাইডেনের প্রশাসনের প্রতিনিধিদল। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক সভার সময়ও, মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে দেখা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জো বাইডেন। আসলে গোটা বিশ্বেই মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলির উপর জোর দেয় ডেমোক্র্যাটরা। তাই কমলা হ্যারিস জয়ী হলে, সম্পর্কের এই সমীকরণই বজায় থাকবে।
কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে, তিনি দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান কাঠামোকে সমর্থন করবেন বলে, মনে করেন না আমেরিকার ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্প মনে করেন আমেরিকার এই মানবিক সহযোগিতা আসলে অর্থ অপচয়। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে, গোটা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও তাঁর প্রশাসন সম্ভবত খুব একটা আগ্রহী হবে না। রোহিঙ্গাদের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের যে সহায়তা পায় বাংলাদেশ, তারও সিংহভাগ দেয় আমেরিকাই। ট্রাম্প সেই অর্থেও কাট-ছাঁট করতে পারেন।
ট্রাম্পের খামখেয়ালি
আমেরিকার ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো খামখেয়ালি প্রেসিডেন্ট আর দেখা যায়নি। সবসময়ই তাঁকে ঘিরে থাকে এক অনিশ্চয়তা। কখন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তার আঁচ পাওয়া যায় না। সাধারণত আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বদল হলেও, তাদের বৈদেশিক নীতিতে বড় কোনও পরিবর্তন হয় না। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি এতটাই শক্তিশালী, যে প্রেসিডেন্টও তাদের উপর ছড়ি ঘোরাতে পারে না। এই প্রতিষ্ঠানগুলিই নীতি নির্ধারণ করে। তবে, ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে প্রতিষ্ঠানগুলিকেই বদলে দেওয়ার কথা বলেছেন। সেটা হলে কিন্তু বড় পরিবর্তন ঘটে যাবে। তবে,মুখে বললেও তা তিনি কতটা কাজে করে দেখাতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে।
ট্রাম্প-মোদী সমীকরণ – ছড়ি ঘোরাবে ভারত?
আমেরিকা যে বিশ্বের সুপারপাওয়ার, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, ভারতও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দাদা। ভারতকে বাদ দিয়ে এই অঞ্চলে আমেরিকার পক্ষেও কিছু করা সম্ভব নয়। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের যে নির্বাচন হয়েছিল, তার কথাই ধরা যাক। সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কড়া প্রশ্ন তুলেছিল আমেরিকা। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে হাসিনা সরকারের প্রতি নয়া দিল্লির সমর্থনই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমেরিকার কণ্ঠ ধীরে ধীরে খাদে নেমে গিয়েছিল।
ভারতের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের নরমে-গরমে সম্পর্ক। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। প্রচার পর্বেও বারবার ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদীকে ‘চমৎকার মানুষ’, ‘আমার বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও জোরালো করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাজেই, ট্রাম্প জয়ী হলে, আমেরিকা-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে ভারত ঢুকে পড়তেই পারে। সেই ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে ইউনুস সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক নাহলে, বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। এক কথায় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে, বাংলাদেশের পক্ষে আর ভারতকে অবজ্ঞা করা সম্ভব হবে না। ভারত নির্ভরতা আরও বাড়বে। অবশ্য, কমলা হ্যারিসের সঙ্গে মহম্মদ ইউনুসের সুসম্পর্ক থাকায়, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত-আমেরিকার মতপার্থক্য বাড়তে পারে।
ইউনুসের বন্ধুরা…
প্রেস সচিব শফিকুল আলম যাই দাবি করুন না কেন, অতীত বলছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট নেতাদের অত্যন্ত ভালে সম্পর্ক। প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০০৯ সালে তাঁকে আমেরিকার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দিয়েছিলেন। উল্টোদিকে, ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, তিনি খোলামেলা ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। সেই সময়, ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন ইউনুস। তিনি বলেছিলেন, তাঁদের দুজনের রাজনৈতিক মতাদর্শ একেবারে আলাদা। আমেরিকায় ট্রাম্পের জয়কে তিনি ‘সূর্যগ্রহণ’ এবং ‘অন্ধকার সময়’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হয়েই, আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত উঁচু পাঁচিলে ঘিরতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই বিষয়ে এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে ইউনুস বলেছিলেন, ‘দেওয়াল’ তৈরি না করে ট্রাম্পের উচিত উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ‘সেতু’ নির্মাণ করা।
কাজেই, ট্রাম্প জয়ী হলে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে মহম্মদ ইউনুস প্রশাসন এবং বাংলাদেশ।