ঢাকা: সংখ্যালঘু সংখ্যালঘু করবেন না। খোপের মধ্যে ঢুকে যাবেন না। তাহলেই গন্ডগোল বাধবে। মঙ্গলবার (১৩ অগস্ট), বাংলাদেশের হিন্দুদের স্পষ্ট বার্তা দিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই নৈরাজ্যর পরিবেশ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। যার বড় মাসুল দিতে হয়েছে হিন্দু-সহ সেই দেশের সংখ্যালঘুদের। অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পরও তার অবসান হয়নি। এর মধ্যে গর্জে উঠেছেন হিন্দুরা। ঢাকায় মিছিল করে জমায়েত করে এই অত্যাচার বন্ধের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে, এদিন ঢাকার বিখ্যাত ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন ইউনুস। মাইনোরিটি রাইটস মুভমেন্টের ৫ সদস্যের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। তারপর বলেন, “নিজেদের সংখ্যালঘু, অমুক-তমুক বলে শ্রেণিবিভাগ না করে বলেন, আমরা এই দেশের মানুষ, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হোক। সব সরকারের কাছে এটা চাইতে হবে।”
ইউনুস জানান, এটা ধর্ম বা জাতি দিয়ে নিজেদের বিভক্ত করার সময় নয়। দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ধর্মের ভেদ, জাতির ভেদ ভুলে বাঙালি পরিচয়ে এক হয়ে থাকতে হবে। তাঁরা এমন এক বাংলাদেশ গড়তে চান, যেটা হবে এক পরিবারের মতো। সেখানে কোনও ধর্ম বা শ্রেণির ভাগ থাকবে না। হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপর হামলার মূল কারণ, বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি পচে যাওয়া বলে দাবি করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস বলেন, “সকল মানুষের জন্য এক আইন, এক সংবিধান। বর্তমানে বিভক্ত হয়ে নয় বরং সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সংকটের সমাধান করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশে থাকব এটাই নিশ্চিত করতে চাই। এটা নিয়ে যেন আর কোনো বিবাদ না হয়। আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাঙ্ক্ষা সেখানে আমরা হিন্দু-মসুলমান হিসেবে নয়, বরং মানুষ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। সব সমস্যার গোড়া হলো, আমাদের যত প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন সেগুলি সব পঁচে গিয়েছে। এই কারণেই গোলমাল হচ্ছে। এর জন্য সবার আগে প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনগুলো ঠিক করতে হবে।”
ইউনুস আরও বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা হলে, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ – সকলেই ন্যায়বিচার পাবে। আইনে কোনও সম্প্রদায়ের কথা আলাদাভাবে বলা নেই। শান্তিতে নোবেলজয়ী বলেন, “আইন হচ্ছে একটা। কার সাধ্য আছে সেখানে বিভেদ করা। এটা হতে পারে না। আমরা সেখান থেকে ঠিক করতে চাই। এটা এমন রোগ যা সারতে আমাদের মূলে যেতে হবে।” এদিন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহম্মদ ইউনুসের কাছে ৫ দফা দাবি জানান মাইনোরিটি রাইটস মুভমেন্টের প্রতিনিধিরা। তাঁদের দাবি-দাওয়া মন দিয়ে শুনেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সব শেষে তিনি হিন্দুদের একটু ধৈর্য ধরতে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাহায্য করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “আমরা পারলাম কি পারলাম না, তা পরে বিচার করবেন।”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)