ওয়াশিংটন: ডেল্টা(Delta Variant)-র থেকেও বেশি সংক্রামক ওমিক্রন(Omicron), এমনই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা, কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো কথাই বললেন আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী তথা প্রেসিডেন্টের মুখ্য স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা ডঃ অ্যান্টনি ফস্যি (Antony Fauci)। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “প্রাথমিক উপসর্গ দেখে মনে হচ্ছে আগের স্ট্রেনগুলির থেকে আরও ভয়াবহ নয় ওমিক্রন। কতটা সংক্রামক হতে পারে এই ভ্যারিয়েন্ট, তা বুঝতে আরও কয়েক সপ্তাহ প্রয়োজন।”
বিশ্বজুড়ে ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ ছড়ানোর পরই মঙ্গলবার প্রথম এই বিষয়ে মুখ খোলেন ডঃ ফস্যি। নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্যকে তিনি মোট তিনটি ভাগে ভাগ করেন- সংক্রামক ক্ষমতা, পূর্ব সংক্রমণ বা ভ্যাকসিনের ফলে তৈরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও এড়িয়ে যাওয়া এবং সংক্রমণ কতটা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
ওমিক্রনের সংক্রামক ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে এটি অত্যন্ত সংক্রামক, হয়তো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকেও বেশি। বিশ্ব জুড়ে এই নতুুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এও বোঝা যাচ্ছে যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকেও সহজেই হার মানাচ্ছে ওমিক্রন।”
আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজের প্রাক্তন ডিরেক্টর ডঃ অ্যান্টনি ফস্যি জানান, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট রুখতে ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি কতটা কার্যকরী, তা পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সেই রিপোর্ট এসে যাবে। এরপর ওমিক্রনের সংক্রামক ক্ষমতা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে। তবে ডেল্টার থেকেও অধিক সংক্রামক কিনা ওমিক্রন, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একপ্রকার নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে এই ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার থেকে বেশি ভয়ঙ্কর নয়। হয়তো একই ক্ষমতা সম্পন্ন বা কম হতে পারে, তবে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন নয়। আক্রান্তের হার ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অনেকটাই কম। তবে এখনই বেশি কিছু বলা উচিত নয়। গুরুতর রোগও বেশ কিছু সপ্তাহ সময় নিতে পারে ভয়াবহ রূপ ধারণ করার জন্য।”
দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ওমিক্রন তার ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় নেবে বলেই জানান ডঃ ফস্যি। তবে আশ্বস্ত করে বলেন, “এই ভ্যারিয়েন্টে এখনও গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মৃত্যুর হার বৃদ্ধির মতো ঘটনা দেখা যায়নি, যা ভাল।”
বিশ্বের ৩৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভ্য়ারিয়েন্টের উৎপত্তি ও অভিযোজন নিয়েও সংশয় রয়েছে। ডঃ ফস্যি জানান, গবেষকদের মধ্যে এখনও এই ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি স্পষ্ট নয়। কমপক্ষে ৩০ বার অভিযোজিত এই ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি নিয়ে দুটি তত্ত্ব উঠে আসছে, হয় এটি কোনও কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, যেমন এইআইভি রোগীর দেহে অভিযোজিত হয়েছে, নয়তো মানব দেহ থেকে জীবজন্তুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুনরায় মানবদেহে অভিযোজিত রূপ হিসাবে প্রবেশ করেছে, যার ফলে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রামক ক্ষমতা বেশি।