২৫টা বছর সময় লাগল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সত্যি কথাটা মেনেই নিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ স্বীকার করলেন যে একতরফা লাহোর চুক্তি ভেঙেছিলেন তাঁরা। আর সেজন্যই কার্গিল যুদ্ধ বাধে। বললেন ভুল আমাদের। তাঁর এই ভুল স্বীকার নিয়ে চাপানউতোর তো চলছেই আন্তর্জাতিক আঙিনাতে। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যাবে ১৯৪৮ সালে সিয়াচেন দখল করে নেয় পাকিস্তান। ৩৬ বছর পর ১৯৮৪ সালে ভারতীয় সেনা সিয়াচেনের সব গুরুত্বপূর্ণ লোকেশন পুনর্দখল করে। সেই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন মেঘদূত। এইবারে ১৯৯৯ সালে আসা যাক। পাক সেনার চার টপ অফিসার জেনারেল এহসান উল হক, জেনারেল আজিজ খান, জেনারেল মেহমুদ আহমেদ ও জেনারেল শাহিদ আজিজ। গ্যাং অফ ফোর। যাঁদের নেতা সেনা জেনারেল পারভেজ মুশারফ। এই গ্যাং অফ ফোরের মাথা থেকেই বেরোয় অপারেশন মিন্ট। কার্গিল দখল করে সিচায়েন নিয়ে দর কষাকষির পরিকল্পনা।
শোনা যায় যায় বাজপেয়ী-শরিফ লাহোর চুক্তি মুশারফের পছন্দ হয়নি। তাঁর নির্দেশেই পাক সেনার স্পেশাল স্কোয়াডের সদস্যরা কার্গিলের সেনা পোস্টগুলি দখল করে। তবে শুরুতে গোটা পরিকল্পনার কথা এই গ্যাং অফ ফোর ছাড়া পাকিস্তানে আর কেউ জানত না। প্রধানমন্ত্রী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ডিজিএমও। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। কেউ না। এভাবেই তৈরি হয়েছিল অপারেশন মিন্ট। পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক নাজম শেঠি জিও নিউজকে এসব জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, সেদিন নওয়াজ শরিফকে বলা হয়েছিল যে পাকপন্থী জঙ্গিরা কার্গিলে ঘাঁটি গেড়েছে। এই সুযোগে কার্গিল দখল করে আমরা ভারতের থেকে সিয়াচেন ফেরত নিতে পারি।
এদিকে কার্গিলে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পর শরিফের কাছে পুরো বিষয়টা স্পষ্ট হয়। তবে তখন বল তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। ভারতের পাল্টা আক্রমণে কার্গিল ছাড়তে হয় পাক সেনাকে। নিজের সেনাদের মরতে দেখেও পাকিস্তান কিছু বলতে পারেনি। কারণ তারাই যে শুরুতে দাবি করেছিল কার্গিলে আমাদের সেনা নেই। ২০০২ সালে কার্গিল যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে বিবিসি খবর করে। সেই প্রতিবেদন আর নাজম শেঠির বয়ানের মধ্যে প্রায় কোনও পার্থক্য নেই। আর সেইজন্যই আজ ২৫ বছর পর আফসোস শোনা গেল নওয়াজ শরিফের গলায়। এমনটাই মত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের।