Omicron Variant: ওমিক্রন-মুক্তিতে ভারতের আগামী দিনে কী পথ নেওয়া প্রয়োজন? সম্ভব্য দিশা দেখালেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

South African Health expert Angelique Coetzee: খুব তাড়াতাড়ি যাবে না। অতিমারি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় মাস্ক। মানুষকে বড় সমাবেশ এড়াতে হবে। এমটাই মনে করছেন অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজ়ি।

Omicron Variant: ওমিক্রন-মুক্তিতে ভারতের আগামী দিনে কী পথ নেওয়া প্রয়োজন? সম্ভব্য দিশা দেখালেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজ়ি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 07, 2022 | 10:11 PM

দক্ষিণ আফ্রিকার বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজ়ি (Angelique Coetzee)। বর্তমানে সাউথ আফ্রিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন তিনি। গত বছরের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন (Omicron Variant) সম্পর্কে প্রথম সতর্ক করেছিলেন। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে উপসর্গগত দিক থেকে পার্থক্যগুলি নজরে এসেছিল অ্যাঞ্জেলিকের।

প্রশ্ন: ওমিক্রনে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞতা কীরকম?

উত্তর: আপনাদের আজ যেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আমাদের অভিজ্ঞতাও একইরকম ছিল। ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংক্যা খুব দ্রুত দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছিল। যাঁদের উপসর্গ ছিল, আমরা তাদের নিজেদেরই পরীক্ষা করতে উৎসাহিত করেছি। সংক্রমণে লাগাম টানতে ঘন ঘন পরীক্ষা করা হচ্ছিল এবং যে করোনা রোগীদের উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। হাসপাতালে ভর্তির হার কম ছিল।

প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকায় কতগুলি ভেন্টিলেটর-যুক্ত বেড ব্যবহার করতে হয়েছিল?

উত্তর: এক্ষেত্রেও সংখ্যাটা খুব কম ছিল। তৃতীয় ঢেউয়ে যখন ডেল্টা ডমিনেন্ট স্ট্রেন ছিল, তার থেকে অনেকটাই কম। বুধবার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ৬৬৬ টি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ১২৯৪ জনের অক্সিজেনের প্রয়োজন। মাত্র ৩০৯ জনের ভেন্টিলেটর প্রয়োজন। সামগ্রিকভাবে, ৮৮৫৭ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অন্যান্য রোগীও রয়েছেন।

প্রশ্ন: ওমিক্রন অনেকটা সাধারণ সর্দির মতো, এই ধারনাটা কেন তৈরি হল ?

উত্তর: এটা জেনে রাখা দরকার যে ৫০ বছরের বেশি বয়সি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের সতর্ক থাকা দরকার। সংক্রমণ মৃদু হতে পারে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট আক্রান্তের নিউমোনিয়া হতে পারে। ওমিক্রন আক্রান্তকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা যেতে পারে কিন্তু এটি কম বিপজ্জনক নয়। কারও জন্য, এটি সাধারণ জ্বর হতে পারে, আবার কারও জন্য জ্বর বেশ গুরুতর রূপ নিতে পারে।

প্রশ্ন: এটি কি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে পঙ্গু করে দিতে পারে?

উত্তর: এটা নির্ভর করছে ভারতে কতজন স্থূলকায় এবং টিকাবিহীন নাগরিক রয়েছেন, তার উপর। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ – এই দুটি বিষয়ের উপর মৃত্যুর হার অনেকটা নির্ভর করে। উল্লেখিত এই ধরনের মানুষের সংখ্যা বেশি হলে, পরিকাঠামোর উপর চাপ অনেকটা বাড়তে পারে। তবে মানুষ যদি সাধারণভাবে সুস্থ থাকে, তাহলে ওমিক্রন চিকিৎসা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করতে পারবে না।

প্রশ্ন: ওমিক্রন কেন বাকিগুলির থেকে আলাদা?

উত্তর: ওমিক্রনও আসলে একটি করোনা ভাইরাস। সুতরাং, এটিকে অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। ওমিক্রনের সংক্রমণ ডেল্টার চেয়ে অনেকটা মৃদু। টিকাকরণ না হয়ে থাকলে, কোনও ব্যক্তি ওমিক্রনের ধাক্কাতেও গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন। তবে ডেল্টা যেমন পুরো ফুসফুসে হামলা করে, ওমিক্রন শ্বাস নালীর উপরের অংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

প্রশ্ন: ভারতের জন্য আগামী দিনের পথ কী হওয়া উচিত?

উত্তর: আমাদের উচিত সাধারণ নাগরিকদের ভ্যাকসিনের মূল্য বোঝানো। সাধারণ নাগরিকদের মাস্ক পরতে হবে, এবং এটি অবশ্যই বাধ্যতামূলকভাবে পরতেই হবে। সংক্রমণ ঠেকাতে বাতাসের চলাচল করতে পারাটা খুব জরুরি। সেই সঙ্গে ভিড়ও এড়ানো দরকার।

প্রশ্ন: এটা কি বলা ঠিক হবে যে ওমিক্রনের মতো ভ্যারিয়েন্টগুলি ভ্যাকসিন বৈষম্যের ফল?

উত্তর: একদমই তাই। আফ্রিকায় ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের আরও একটি সমস্যা আছে। আমাদের লজিস্টিক সমস্যা আছে। এই ভ্যাকসিনগুলি কাজ করে যেখানে রেফ্রিজারেটর রয়েছে এবং শহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলি ভালভাবে সংযুক্ত রয়েছে। পরিকাঠামোগত অভাবের কারণে আফ্রিকায় এই টিকার ব্যবহারের পুরো প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট জটিল। কোম্পানিগুলির উচিত ট্যাবলেট আকারে ভ্যাকসিন তৈরি করা। এতে দরিদ্র দেশগুলিও টিকা ভালভাবে ব্যবহার করতে পারবে। মেয়াদ শেষের দিকে চলে এলে, ভ্যাকসিনগুলি দক্ষিণ আফ্রিকায় ফেলেও দেওয়া যেতে পারে, তবু সমস্যা সমাধানে কাজ করবে না। পশ্চিমী দেশগুলি বুস্টার ডোজ দেওয়া চালিয়ে যেতে পারে কিন্তু, যতক্ষণ না আফ্রিকায় সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসতে থাকবে।

প্রশ্ন: ওমিক্রন কি আবার পরিবর্তন করতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, এটি পরিবর্তন ঘটাতে পারে। প্রশ্ন হল, এর পরিবর্তন হবে কীভাবে? এটি কি মারাত্মক কিছু হবে নাকি কেবল দ্রুত পরিবর্তনশীল একটি ভাইরাস হয়ে থেকে যাবে? মানুষ ভাইরাসের সঙ্গে বাঁচতে শিখবে। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। মানুষকে কিছু সময়ের জন্য মাস্কের সঙ্গে বাঁচতে শিখতে হবে।

প্রশ্ন: আপনি কি বলছেন যে কোভিড খুব তাড়াতাড়ি যাবে না?

উত্তর: না, খুব তাড়াতাড়ি যাবে না। অতিমারি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় মাস্ক। মানুষকে বড় সমাবেশ এড়াতে হবে। আগামী দুই থেকে তিন বছর আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক নামালে চলবে না। আগে যেমনভাবে জীবন কাটাতাম আমরা, সেভাবে কাটানো যাবে না। মানুষ স্বভাবগতভাবে সামাজিক জীব, মেলেমেশা করতে পছন্দ করে। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয়। আপনি যদি বাইরে যেতে চান, তবে নিশ্চিত করুন যে জায়গাটিতে বাতাস চলাচলের জায়গা পর্যাপ্ত রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায়, আমরা মাস্ক পরার প্রচার চালিয়েছি। দক্ষিণ আফ্রিকায় কারফিউ নেই। কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ভ্যাকসিন এবং মাস্ক দিয়েই জীবন বাঁচানো যায়। কিন্তু বুস্টার ডোজ় দিলে চলবে না।

প্রশ্ন: আপনি কি বলছেন যে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বুস্টার কার্যকর নয়?

উত্তর: না। বৈজ্ঞানিক দিক থেকে দেখলে, আপনি বুস্টার ডোজ় দেওয়া চালিয়ে যেতে পারেন। সরকার কতদিন এমন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষকে যুক্ত রাখতে পারবে? সরকার কতদিন পর্যন্ত মানুষকে বুস্টার ডোজ় নেওয়ার জন্য বলতে থাকবে? একমাত্র প্রতিরোধ হল মাস্ক এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। আপনাকে টিকাকরণে জোর দিতে হবে। এমন জায়গাও আছে, যেখানে টিকাকরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। আমাদের মানুষের আচরণ বুঝতে হবে। কারণ, একটা পর্যায় আসবে, যখন লোকেরা বলবে যে আমাদের যথেষ্ট টিকা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: গণতন্ত্র কি করোনার মধ্যে টিকে থাকতে পারে?

উত্তর: গণতন্ত্র টিকে থাকবে। লোকেরা রাস্তায় বেরোতে পারবে এবং সবার সঙ্গে দেখাও করতে পারেন, তবে কোভিড নির্দেশিকা মেনে চলতেই হবে। মাস্ক শুধু আপনাকেই নয়, বাকিদেরও সুরক্ষিত রাখে।

আরও পড়ুন : Vaccination in India: ‘কোভিড-সুনামি’র আতঙ্কের মধ্যেই ভালো খবর! ১৫০ কোটি টিকাকরণের মাইলফলক পার ভারতের