কাবুল: গোটা দেশ তাকিয়ে ছিল তাঁর দিকেই, আর তিনিই দেশবাসীকে বিপদের মুখে ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। নিজের এই কীর্তির জন্য ফের একবার ক্ষমা চাইলেন প্রাক্তন আফগান প্রেসি়েন্ট আশরাফ ঘানি (Ashraf Ghani)। একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিলেন, দেশ ছাড়ার সময় সরকারের তহবিল থেকে এক টাকাও নিয়ে আসেননি তিনি। প্রয়োজনে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের অর্থসম্পত্তির অডিট করাতেও রাজি তিনি।
১৫ অগস্ট ভারত যখন স্বাধীনতা দিবস পালন করছিল, সেই দিনই তালিবানের কবজায় চলে গিয়েছিল আফগানিস্তান (Afghanistan)-র রাজধানী কাবুল (Kabul)। আগেই কান্দাহার, হেরাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশগুলি দখল করে নেওয়া তালিবানরা ঘোষণা করে গোটা আফগানিস্তানই তারা দখল করেছে। ক্ষমতার হস্তান্তর নিতে প্রেসিডেন্ট হাউসের দিকে রওনা দিয়েছে তালিবান, এই খবর পাওয়ার কিছুক্ষণ পরই জানা যায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ঘানি।
দেশবাসী যখন চরম বিপদের মুখে, সেই সময়ই তাদের একা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় ঘরে-বাইরে চরম সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়। শোনা যায়, একটি বা দুটি হেলিকপ্টার ভর্তি টাকা নিয়ে তিনি পালিয়ে গিয়েছেন। নানা জল্পনার পর জানা যায়, মানবতার খাতিরে ঘানিকে আশ্রয় দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। সেই সময়ই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাফাই দিয়ে বলেছিলেন যে, আফগানিস্তানে রক্তগঙ্গা যাতে না বয়ে যায়, সেই কারণেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।
বুধবারও টুইটারে আশরাফ ঘানি একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে লেখেন, “আফগানিস্তান ছেড়ে আসা আমার জন্য সবথেকে কঠিন কাজ ছিল। তবে আর যেন রক্তক্ষয় না হয়, সেই কারণেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম।” দেশ ছাড়ার সময় তিনি কোনও টাকা চুরি করে আনেননি বলেও জানান।
Statement 8 September 2021 pic.twitter.com/5yKXWIdLfM
— Ashraf Ghani (@ashrafghani) September 8, 2021
নিজের বিবৃতিতে ঘানি লিখেছেন, “গত ১৫ অগস্ট তালিবানরা কাবুল শহরে ঢুকে পড়ার পর আচমকাই আমি কেন দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম, আফগানবাসীর কাছে তাঁর জবাব দিতে আমি বাধ্য। আমি প্রাসাদের নিরাপত্তারক্ষীদের অনুরোেধেই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ৯০-র দশকে যুদ্ধের সময় প্রতিটি পথেঘাটে যেভাবে রক্তবন্যা বয়ে গিয়েছিল, আমি যদি পিরাসাদেই থাকতাম, তবে একই ঘটনা ঘটত।”
সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই কাবুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এ কথা উল্লেখ করে ঘানি বলেন, “কাবুল ছাড়ার সিদ্ধান্ত আমার জীবনের সবথেকে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। তবে আমি বিশ্বাস করি একমাত্র এই উপায়েই তালিবদের বন্দুকগুলিকে নিশ্চুপ ও ৬০ লক্ষ আফগানবাসীদের রক্ষা করা যেত।”
দেশ ছাড়ার আগে লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে আসার যে অভিযোগ উঠেছে, তা উড়িয়ে দিয়ে ঘানি বলেন, “আমার স্ত্রী ও আমি অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাধীন ও স্বাবলম্বী। আমি জনগণের কাছে আগেই আমার সম্পত্তির হিসাব দিয়েছি। আমার স্ত্রীর পৈত্রিক সম্পত্তিও তুলে দরা হয়েছে। লেবাননে তাঁর নামে কী কী সম্পত্তি রয়েছে, সমস্ত কিছুর উল্লেখ রয়েছে। এরপরও আমার বক্তব্যকে সত্য প্রমাণ করতে আমি আর্থিক তদন্ত বা অডিট করাতে রাজি রাষ্ট্রপুঞ্জ বা সঠিক কোনও তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে।”
আফগানিস্তানে ব্যাপক দুর্নীতির কথাও স্বীকার করে নেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, “দুর্নীতি এমন একটা রোগ, যা আমাদের দেশকে দীর্ঘ কয়েক দশসক ধরে পঙ্গু করে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল এই দূর করা।”