কাবুল: আফগানিস্তানে হঠাৎ তালিবান(Taliban)-র ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং একের পর এক প্রদেশ দখলের পরই সন্দেহ জেগেছিল, তালিবানকে গোপনে মদত দিচ্ছে অন্য কোনও শক্তি। সন্দেহের তির গিয়েছিল পাকিস্তান(Pakistan)-র দিকে। নতুন সরকারের ঘোষণা হওয়ার পরই সেই সন্দেহ যে কতটা সত্যি ছিল, তার প্রমাণ মিলল। তালিবানের মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন দুই হাক্কানি নেতা (Haqqani Leaders)। এদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে পাকিস্তানের!
গত ১৫ অগস্ট আফগানিস্তান দখলের পরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Imran Khan) বলেছিলেন, “দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি পেল আফগানবাসী”। বিতর্কের সূত্রপাত সেখান থেকেই। আফগানিস্তানে তালিবানি অভ্যুত্থানের পিছনে পাক বাহিনীর মদত রয়েছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের তরফে বরাবরই বলে আসা হয়েছে যে, প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা নাক গলাতে আগ্রহী নন। তবে বাস্তবে ভিন্ন চিত্রটাই দেখা গিয়েছে।
মঙ্গলবার তালিবানের অন্তবর্তী সরকার ঘোষণার পরই দেখা যায় মন্ত্রিসভায় রয়েছেন দুই হাক্কানি নেতা। দেশের নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এফবিআই(FBI)-র “মোস্ট ওয়ান্টেড”র তালিকাতেও তাঁর নাম রয়েছে। এছাড়াও আরও দুই হাক্কানি গোষ্ঠীর সদস্যের নামও উঠে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের তালিকায়। পাকিস্তানের এই হাক্কানি গোষ্ঠীকেই মন্ত্রিসভায় এত প্রাধান্য দেওয়ায় পাক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তবে পাকিস্তানের উপর সন্দেহ হওয়ার কারণ কেবল এই হাক্কানি গোষ্ঠীই নয়। গত সপ্তাহেই তালিবান সরকার ঘোষণার কথা ছিল। সেই সময়েই আফগানিস্তানে (Afghanistan) যান পাকিস্তানের আইএসআই প্রধান। দীর্ঘ সময় ধরে পঞ্জশীরের দখল নিতে না পারলেও আইএসআই প্রধানের সফরের পরই তালিবান দখল করে নেয় প্রতিরোধ বাহিনীর ঘাঁটি। পঞ্জশীর দখলের আগে থেকেই প্রতিরোধ বাহিনীর তরফে দাবি করা হয়েছিল, একা তালিবান নয়, তাদের সঙ্গে লড়ছে আল কায়েদা সহ একাধিক পাক জঙ্গি গোষ্ঠী। এমনকি পঞ্জশীরে পাক হেলিকপ্টারও দেখা যায়।
অন্যদিকে, তালিবান সরকার গঠন নিয়ে আলোচনার শুরু থেকেই মোল্লাহ আব্দুল ঘানি বরাদরের নাম উঠে এসেঠিল প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে গিয়ে মোল্লা হাসান আখুন্দকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানো হয়। এই সিদ্ধান্তে দোহার তালিবান গোষ্ঠীকে কিছুটা একঘরে করে দেওয়া হয়েছে বলেই অভিযোগ। সান্তনা পুরস্কার হিসাবে দোহা গোষ্ঠীরই অপর তালিবান নেতা শের আব্বাস স্ট্যানিকজ়াইকে ডেপুটি বিদেশমন্ত্রী বানানো হয়েছে।
তালিবান সরকারে হাক্কানি গোষ্ঠীর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের। ২০০৮ সালে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার পিছনে এই হাক্কানি গোষ্ঠীরই হাত ছিল বলে ধারণা। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলেও ভারত দাবি করে। যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করে পাকিস্তান। আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য পরিচিত হাক্কানি গোষ্ঠী ক্ষমতা হাতে তুলে নেওয়ার পর পাকিস্তানের প্ররোচনায় জম্মু-কাশ্মীর সহ গোটা হামলাতেই হামলা চালাতে পারে। এই কারণেই মনে করা হচ্ছে, আফগানিস্তানে তালিবান তদারকি সরকার গঠন করলেও পাকিস্তানের হাতেই রিমোট কন্ট্রোল থাকবে সরকার পরিচালনার।
আরও পড়ুন: ‘মোল্লাদের ডিগ্রি না থাকলেও বিশ্বসেরা’, স্নাতকোত্তর-পিএইচডি ‘মূল্যহীন’ ঘোষণা তালিব শিক্ষামন্ত্রীর
আরও পড়ুন: ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পে আতঙ্ক শহরে, কয়েক’শ কিলোমিটার দূরেও অনুভূত হল কম্পন