‘মোল্লাদের ডিগ্রি না থাকলেও বিশ্বসেরা’, স্নাতকোত্তর-পিএইচডি ‘মূল্যহীন’ ঘোষণা তালিব শিক্ষামন্ত্রীর

নতুন শিক্ষামন্ত্রী শেখ মৌলবি নুরউল্লাহ মুনির বলেন, "আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির কোনও মূল্য নেই। মোল্লা ও তালিবান নেতারা, যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাদের কাছে কোনও পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেই। তাদের কাছে হাই স্কুলের ডিগ্রিটুকুও নেই। তবুও আজ তাঁরা বিশ্ব সেরা।"

'মোল্লাদের ডিগ্রি না থাকলেও বিশ্বসেরা', স্নাতকোত্তর-পিএইচডি 'মূল্যহীন' ঘোষণা তালিব শিক্ষামন্ত্রীর
এভাবেই লেখাপড়া চলছে বিশ্ববিদ্য়ালয়ে। ছবি: টুইটার।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 08, 2021 | 11:55 AM

কাবুল: নতুন সরকার ঘোষণার পরই আমুল পরিবর্তন এল আফগানিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থায় (Afghanistan Education system)। নতুন শিক্ষামন্ত্রী শেখ মৌলবি নুরউল্লাহ মুনির (Sheikh Molvi Noorullah Munir) জানালেন স্নাতকোত্তর (Masters) বা পিএইচডি (PhD) ডিগ্রির কোনও মূল্যই নেই। কারণ মোল্লাদের কাছে এই ডিগ্রি না থাকলেও আজ তারা বিশ্বসেরা।

আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের দু’সপ্তাহ পর মঙ্গলবার অবশেষে নতুন সরকারের ঘোষণা করেছে তালিব বাহিনী। ইরান মডেলে তৈরি মন্ত্রিসভার ৩৩ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। তালিব সরকারের শীর্ষ স্থানে থাকবেন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (Hibatullah Akhundzada)। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেন মহম্মদ হাসান আখুন্দ। আব্দুল গনি বরাদর হলেন তাঁর ডেপুটি।

আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার সামলাবেন আমির খান মুত্তাকি, তাঁর ডেপুটি হবেন আব্বাস স্তানিকজাই।। সরাজউদ্দিন হাক্কানি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশ মন্ত্রী হলেন আমির খান মুত্তাকি। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোল্লা হেদিয়াততুল্লা বাদরিকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা মন্ত্রী করা হয়েছে শেখ মওলাই নুরুল্লা। সংস্কৃতি মন্ত্রী হলেন মোল্লা খাইরুল্লা খেরখান।

একদিকে সরকার গঠনের পরই সুপ্রিম লিডার হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা জানিয়েছেন, নয়া আফগানিস্তান সরকার পরিচালিত হবে শরিয়া আইনেই। এই শরিয়া আইনেই মহিলাদের শিক্ষার অধিকার নেই। নয়া সরকারে শিক্ষা ব্যবস্থায় কোপ পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করা হয়েছিল, এবার সেই আশঙ্কাই সত্যি করে নতুন শিক্ষামন্ত্রী শেখ মৌলবি নুরউল্লাহ মুনির জানিয়ে দিলেন পিএইডি বা মাস্টার্স ডিগ্রির কোনও মূল্য নেই।

তিনি বলেন, “আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির কোনও মূল্য নেই। আপনারাই দেখুন, মোল্লা ও তালিবান নেতারা, যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাদের কাছে কোনও পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেই। তাদের কাছে হাই স্কুলের ডিগ্রিটুকুও নেই। তবুও আজ তাঁরা বিশ্ব সেরা।”

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালিবরাজেও জারি ছিল শরিয়া আইন। সেই সময়ে মহিলাদের শিক্ষার কোনও অধিকার ছিল না। উচ্চস্বরে কথা বলা, পায়ের শব্দ হওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল। বাড়ি থেকে বেরনোর জন্য সঙ্গে সবসময় স্বামী বা রক্তের সম্পর্কযুক্ত কোনও পুরুষসঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হত। নিজেদের সবসময় বুরখা বা হিজাবে ঢেকে রাখতে হত। কোনও নিয়মের অমান্য হলেই জনসমক্ষে পাথর ছুড়ে মৃত্য়ুদণ্ড দেওয়ার নিদান ছিল।

২০ বছর পর ফের একবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করার পরই তালিবানি শীর্ষনেতারা জানিয়েছিলেন, আগের তুলনায় অনেক পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছেন তারা। মহিলাদের সম্মান করা হবে, তাদের শিক্ষা ও চাকরি করার অধিকারও দেওয়া হবে। যদিও বাস্তবে ঠিক উলটো ঘটনাটিই ঘটছে। অধিকাংশ অফিস থেকেই মহিলা কর্মীদের বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

সম্প্রতিই তালিবানের তরফে ফতেয়া জারি করে জানানো হয়েছিল, মহিলারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারলেও তারা ছাত্রদের সঙ্গে একই কক্ষে বসতে পারবেন না। রবিবারই তালিবান এডুকেশন কমিটির তরফে একটি লম্বা তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্য়ালয়ের পড়ুয়াদের কী কী নিয়ম মানতে হবে, তা জানানো হয়েছে। যদি আলাদা ক্লাসরুমের ব্যবস্থা না করা যায়, তবে ১৫ জনের বেশি পড়ুয়া থাকলেও মাঝখানে পর্দা টাঙিয়ে দিতে হবে। মহিলাদের ক্লাসও ৫ মিনিট আগে শেষ করতে হবে, যাতে বেরনোর সময় পুরুষদের সঙ্গে দেখা না হয়। মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য আবায়া ও নিকাব পরতে হবে। স্বামী বা রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনও পুরুষ সঙ্গীর তত্বাবধানেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন।

আরও পড়ুন: দরজা খোলো, আমরা বাঁচতে চাই’, মধ্যরাতে জেলেই ঝলসে মৃত ৪১ বন্দি