ইসলামাবাদ: আর মাত্র ৩ দিন বাকি। ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে ভোটগ্রহণ। শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত সব দল। নির্বাচনের ফলাফল যেদিকেই যাক না কেন, এই নির্বাচনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে ডা. সাভীরা প্রকাশের জন্য। দেশের প্রথম হিন্দু মহিলা হিসেবে জাতীয় পরিষদের ভোটে লড়ছেন তিনি। আর তাঁর কাছে এই নির্বাচন আরও স্মরণীয় কারণ, তাঁর জয়ের জন্য মসজিদে প্রার্থনা করছেন তাঁর মুসলিম ভাই-বোনরা। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ শুধু নয়, গোটা পাকিস্তান ধর্ম নির্বিশেষে তাঁকে গ্রহণ করেছে ‘বুনের কি বেটি’ (বুনেরের মেয়ে) হিসেবে।
২০২২ সালে অ্যাবটাবাদ ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন ডা. সাভীরা প্রকাশ। তারপর, পাকিস্তানের সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসেস বা সিএসএস পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন ছয়টি ভাষায় পারদর্শী এই চিকিৎসক। কিন্তু, পাকিস্তান পিপলস পার্টি বা পিপিপি তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল নির্বাচনে লড়ার জন্য। এই হিন্দু মহিলা ডাক্তারকে বুনের শহরের পিকে-২৫ আসন থেকে প্রার্থী করেছে বিলাবল ভুট্টোর পার্টি। সাভীরার বাবাও একজন চিকিৎসক, ডা. ওম প্রকাশ। ১৯৯৫ সাল থেকেই তিনি পিপিপি দলের সঙ্গে যুক্ত। কাজেই ছোটবেলা থেকেই পিপিপি দলের রকাজনীতির প্রতি আকর্ষণ রয়েছে সাভীরার। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যার পর, অঝোরে কেঁদেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে, পাকিস্তানের রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে মহিলাদের উপর বিবিধ বিধিনিষেধ রয়েছে। যে সমাজ, মহিলাদের বোরখার আড়ালে রাখতে চায়, সেখানে একজন অমুসলিম মহিলার পক্ষে নির্বাচনে জেতাটা মোটেই সহজ নয়। তা জানেন ডা. সাভীরা প্রকাশ। তবে তাঁর দাবি, “পাকিস্তানের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ও মহিলাদের জায়গা রয়েছে। সেই কারণেই পিপিপি আমাকে প্রার্থী করেছে। আমার আসনটি মহিলা বা সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিতও নয়, এটি একটি সাধারণ আসন।”
শুধু তাই নয়, তিনি জানিয়েছেন ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে বুনেরের আম জনতার কাছ থেকে বিপুল সমর্থনও পাচ্ছেন তিনি। এমনকি, তাঁর নির্বাচনী সাফল্য কামনা করে মসজিদে মসজিদে চলছে নামাজ। বড়দের পাশাপাশি, বিভিন্ন মাদ্রাসাগুলিতে শিশুরাও নাকি তাঁর সাফল্য প্রার্থনা করছে। আর তাঁর হয়ে প্রচার করছেন যাঁরা, তাঁর প্রচার দলের সকল সদস্যও মুসলমানই। কাজেই সংখ্যালঘু পরিচয়টা তাঁর জয়ের পথে প্রতিবন্ধক হবে না বলেই মনে করছেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত যদি ভোটে জিতে তিনি ইতিহাস রচনা করেন, তারপর কী? অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সংকটে ডুবে থাকা পাকিস্তানের উন্নয়ন নিয়ে কী ভাবছেন সাভীরা? খুব বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিতে চাননি তিনি। যা তনি করতে পারেন, যা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব, সেই কথাই ভোটারদের বলেছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসক হিসেবে তিনি তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র, বুনেরের হাসপাতালগুলির উন্নয়নে মন দিতে চান। মহিলারা যাতে হাসপাতালগুলিতে নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পারেন, সেই দিকে নজর দেবেন। পাশাপাশি, বুনেরে মেয়েদের জন্য কলেজ তৈরি করা, মহিলাদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা এবং ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি, পাক সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা নেওয়ার স্বপ্নও দেখেন ডা. সাভীরা প্রকাশ।