হংকং: ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা এআই-এর সহায়তায়, ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ভিডিয়ো বর্তমান সময়ের অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিন পর্যন্ত, নকল ভিডিয়ো তৈরি করা হচ্ছিল বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের। এবার, ডিপফেকের দৌলতে এক বড় মাপের প্রতারণার শিকার হল হংকং-এর এক বহুজাতিক সংস্থা। হংকং পুলিশ জানিয়েছে, সংস্থার কর্মচারীরা এক ভিডিয়ো কনফারেন্সে মিলিত হয়েছিলেন। বিস্ময়কর হল, একজন মাত্র কর্মচারী ছাড়া, ভিডিয়ো কনফারেন্সটিতে অংশগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিই ছিলেন নকল। ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাদের ডিজিটাল ক্লোন তৈরি করা হয়েছিল। আর সেই ডিজিটাল ক্লোনগুলিকেই সংস্থার আসল কর্মচারীদের বলে ধরে নিয়েছিলেন ওই কর্মী। এই সামান্য ভুলের দিতে হয়েছে বড় খেসারত। খোয়া গিয়েছে সংস্থার ২৫.৬ মিলিয়ন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ২০০ কোটির টাকারও বেশি অর্থ ।
ডিপফেক হল এক ধরনের সিন্থেটিক মিডিয়া কনটেন্ট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কোনও ব্যক্তির অবিকল ভিডিয়ো কনটেন্ট তৈরি করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ধরনের ভিডিয়ো তৈরির পিছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকে। এই ক্ষেত্রেও প্রতারকরা তাই করেছিল। সংস্থার চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার বা সিএফও-সহ সংস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্তা এবং অন্যান্য কর্মীদের ডিজিটাল ক্লোন তৈরি করা হয়েছিল। অর্থাৎ, ডিজিটাল পরিসরে তাদের দেখে নকল বা কম্পিউটারে তৈরি করা বলে, চেনার উপায় ছিল না। সংস্থাটির ভিডিয়ো কনফারেন্সে, আসল মানুষ ছিলেন সংস্থার অর্থ বিভাগের এক কর্মচারী।
ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। সংস্থার সিএফও ব্রিটেনে থাকেন। তাঁর কাছ থেকে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মীটি আচমকা একটি বার্তা পেয়েছিলেন। এক গোপন আর্থিক লেনদেনের নির্দেশ ছিল সেই বার্তায়। প্রাথমিভাবে ওই কর্মচারীর সন্দেহ হয়েছিল। তারপরও তিনি ওই গ্রুপ ভিডিয়ো কনফারেন্সে অংশ নেওয়ার ফাঁদে পা দেন। ভিডিয়ো কল চলাকালীন, সংস্থার এক নিখুঁত ডিপ ফেক ভিডিয়ো উপস্থাপন করা হয়েছিল, যে কর্মীটির সকল সন্দেহ দূর হয়ে গিয়েছিল। এরপর, সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের ডিজিটাল ক্লোন, অর্থ বিভাগের ওই কর্মীকে, হংকংয়ের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সব মিলিয়ে ২৫ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়।
এর প্রায় এক সপ্তাহ পর, ওই কর্মী বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারকরা ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের ডিজিটাল ক্লোন তৈরি করেছিল। তাদের কণ্ঠস্বর এবং চেহারার বিশ্বাসযোগ্য নকল তৈরি করেছিল। ভিডিয়ো কনফারেন্সের শুরুতে, সেই ডিজিটাল ক্লোনদের দিয়ে তাদের নিজেদের পরিচয়ও দেওয়ানো হয়। আর ওই অর্থপ্রদানের নির্দেশ দেওয়ার পরই হঠাৎ করেই মিটিং শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে তারপরও, কখনও মেসেজিং অ্যাপে, কখনও ইমেইলে এবং কখনও ভিডিয়ো কলে, অর্থ বিভাগের ওই কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল প্রতারকরা। হংকং পুলিশ এই মামলার তদন্ত শুরু করেছে। তবে, এখন পর্যন্ত এই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত, সেই সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।