ভারতীয় অর্থনীতি উন্নয়নে ট্রাম্পের থেকে বেটার বাইডেন! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

বিগত বছরে যেমন বারবার ভারত-আমেরিকা সুসম্পর্কের জেরে দুই দেশই লাভবান হয়েছে, এবারেও তার অন্যথা হবে না।

ভারতীয় অর্থনীতি উন্নয়নে ট্রাম্পের থেকে বেটার বাইডেন! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
জো বাইডেন
Follow Us:
| Updated on: Nov 09, 2020 | 9:02 AM

TV 9 বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ভোট তো বটেই পপুলার ভোটেও জিতেছেন জো বাইডেন (Joe Biden)। আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট তিনিই। আর প্রথম মহিলা, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে চলছেন কমলা হ্যারিস। মার্কিন নির্বাচনের উপর নির্ভর করে থাকে সারা বিশ্বের অর্থনীতি। ভারতের অর্থনীতিও অনেকাংশে হোয়াইট হাউস নির্ভর। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের জায়গায় বাইডেন আসায় ভারতের অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়বে?

ভারত আমদানির থেকেও আমেরিকায় পণ্য বেশি রফতানি করে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিগত ২০ বছর ধরে ক্রমাগত আমেরিকায় রফতানি করা পণ্যের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯-২০ সালে আমেরিকায় ভারত ৫৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যা ভারতের মোট রফতানির ১৭ শতাংশ। আর আমদানি করেছে ৩৫৭০ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ হিসাব মতো ভারতীয় পণ্যের বড় বাজার রয়েছে আমেরিকায়। এবার আমেরিকা যদি বাণিজ্যে অধিক শুল্ক বসায় তা ভারতের জন্য ক্ষতিকারক। পণ্য ছাড়াও ভারতীয় পরিষেবার বিপুল বাজার রয়েছে আমেরিকায়। সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ২৯৭০ কোটি টাকার ভারতীয় পরিষেবার বাজার আমেরিকা।

Joe Biden

বাইডেন ও কমলা হ্যারিস

ভারতের যে সব বিদেশি বিনিয়োগ আসে তার প্রথম ৫ মধ্যে রয়েছে আমেরিকা। ভারতে প্রায় ৪৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে আমেরিকা। অর্থাৎ বিষয়টা পরিষ্কার। ভারতের ‘রুপি’ অনেকাংশেই মার্কিন ‘ডলারের’ উপর নির্ভরশীল। তাহলে বাইডেন এলে কি হবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেন ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিতে বিশ্বাসী নন। ট্রাম্পের মতে বাণিজ্যে সব সময় দুটি দেশের লাভ হবে এমন কোনও কথা নেই। এক দেশের ক্ষতিও হতে পারে। কিন্তু বাইডেন দুই দেশের লাভে বিশ্বাসী। তাই ২০১৭-২৮ এর পর থেকে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি জোয়ার আসতে পারে বাইডেন আমলেই। এমনটা মত বিশেষজ্ঞদের। জো বাইডেন প্রথমে করোনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন। তারপর বাণিজ্যে পা বাড়াবেন। আর তখন ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ রফতানির মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নতি করতে পারবে।

সরাসরি বাণিজ্য নীতি ছাড়াও বাইডেনের অভিবাসন ও ভিসা নীতিও প্রভাব ফেলবে ভারতের অর্থনীতিতে। ট্রাম্প এইচ-১ বি ভিসা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। ফলে ভারতের কর্মীরা সাময়িক ভাবে আমেরিকায় গিয়ে কাজ করতে পারতেন না। কিন্তু সেই পথে হাঁটবেন না বাইডেন। তিনি এইচ-১ বি ভিসা অনুমোদনের পক্ষে। ফলে লাভ হবে ভারতীয় কোম্পানিগুলিরই। অভিবাসনে নিয়ে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ চিন্তা ভাবনা ছিল ট্রাম্পের। কিন্তু বাইডেন বিশ্বাস করেন উদার অভিবাসন নীতিতে। তিনি মনে করেন সারা বিশ্বের মানুষ আমেরিকায় এসে এই দেশকে মহান বানাবেন।

ঘুর পথে হলেও বাইডেনের অনেক সিদ্ধান্তই পরোক্ষ ভাবে লাভ করবে ভারতের অর্থনীতির উন্নতিতে। বাইডেন বারবার জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে আমেরিকা-ইরান সুসম্পর্কের জন্য কাজ করবেন। ট্রাম্প আমলে এই সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। তাই বাইডেন যদি ইরান ঘনিষ্ঠ হন, তাহলে সরাসরি তেল পাবে ভারত। ফলে গতি পাবে অর্থনীতি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সরে গিয়েছিলেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে। বাইডেন আগেই জানিয়েছেন তিনি এলে ফের সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। অর্থাৎ ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও শক্ত হওয়ার পথও খোলা থাকবে।

ওয়াকিবহালের ধারণা, ট্রাম্পের মতো না-হলেও চিন বিরোধিতা কায়েম রাখবেন বাইডেন। সঙ্গে খোলা রাখবেন আলোচনার পথও। চিনের সঙ্গে নরমে গরমে খেললেও ভারতের পাশে বাইডেন সব সময় থাকবেন একথা নিজের মুখে জানিয়েছে তিনি। অর্থাৎ বিগত বছরে যেমন বারবার ভারত-আমেরিকা সুসম্পর্কের জেরে দুই দেশই লাভবান হয়েছে, এবারেও তার অন্যথা হবে না। বরং আরও ভাল হবে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।