TV9 Bangla Explained on Xi Jinping: ক্ষেতে লাঙল টানা থেকে চিনের রাষ্ট্রপ্রধান, কীভাবে মাও জে দং-র সমক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে উঠলেন জিনপিং?

Xi Jinping as Global Leader: রাজনৈতিক উত্থানের পিছনে বাবার ভূমিকা থাকলেও, রাষ্ট্রনেতা হিসাবে নিজের জায়গা তৈরি করার পিছনে রয়েছে জিনপিংয়ের বুদ্ধিমত্তা ও কূটনৈতিক চিন্তাধারাই।

TV9 Bangla Explained on Xi Jinping: ক্ষেতে লাঙল টানা থেকে চিনের রাষ্ট্রপ্রধান, কীভাবে মাও জে দং-র সমক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে উঠলেন জিনপিং?
শি জিনপিং
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 24, 2022 | 6:10 AM

বেজিং: চিনের কমিউনিস্ট পার্টি বলতেই আগে সকলের মাথায় আসত মাও জে দংয়ের নাম। কিন্তু সেই চিন্তাধারাতেই এবার পরিবর্তন হতে চলেছে, কারণ মাও-র সম ক্ষমতা সম্পন্ন হতে চলেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চিনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম কংগ্রেস অধিবেশনে এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে। এই সম্মেলনেই বহু গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ক্ষমতা। এর জন্য চিনের সংবিধানে আনা হয়েছে একাধিক পরিবর্তন। জিনপিংকেই কমিউনিস্ট পার্টির ‘কোর’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের সবথেকে জনবহুল ও অন্যতম বড় সাধারণতন্ত্রের দেশে একাধিপত্য স্থাপন করলেন কী করে?

চিনের কমিউনিস্ট পার্টির ২০ তম কংগ্রেস অধিবেশনেই তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন শি জিনপিং। এই প্রথম চিনের কোনও নেতা তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তেই আভাস মিলেছে, মাও জে দং-র সমক্ষমতা সম্পন্ন হতে চলেছেন শি জিনপিং। এটাই লক্ষ্য ছিল জিনপিংয়ের। সর্বাধিনায়ক হয়ে ওঠার এই লড়াইও সহজ ছিল না।

চিনের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ঘাটলেই দেখা যাবে, বাকি বিশ্বনেতাদের থেকে অনেকটা আলাদা শি জিনপিং। বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে কোনও রাষ্ট্রনেতা রয়েছে, যিনি চাষ-আবাদ করেছেন বা গুহায় দিন কাটিয়েছেন ? এই সমস্ত ক্ষেত্রেই বাকিদের থেকে আলাদা জিনপিং। চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় অত্যন্ত কঠিন জীবনযাপন করতেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।

কমিউনিস্ট পার্টির তথ্য অনুযায়ী, কৈশোরকাল ইয়াননে কাটিয়েছিলেন জিনপিং। সেই সময় ওই অঞ্চল কমিউনিস্টদের ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত ছিল। সেখানেই চাষ-আবাদ করতেন শি জিনপিং। তবে এর বিরুদ্ধেও একাধিক তত্ত্ব রয়েছে। সমালোচকদের দাবি, কোনও কষ্টই করতে হয়নি জিনপিংকে। বরং মুখে সোনার চামচ নিয়েই জন্মেছিলেন তিনি। তাঁর বাবা চিনের কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদে ক্ষমতাসীন ছিলেন। সাধারণ মানুষের চোখে পর্দা দিতেই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তাঁর জীবনযাত্রাকে তুলে ধরা হয়। এর পিছনেও কারণ রয়েছে। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন কমিউনিস্ট শীর্ষ নেতা মাও জে দং-ই নির্দেশ দিয়েছিলেন সমাজের যুব সমাজকে কৃষকদের কষ্টকর জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার জন্য গ্রামে তাদের সঙ্গে গিয়ে থাকতে হবে।

China President

ষাটের দশকে চিনের শুদ্ধিকরণের সময় জেলে পাঠানো হয় জিনপিংয়ের বাবাকে। সেই সময় নানা হেনস্থার শিকার হয় জিনপিং পরিবার। তবে খারাপ সময়ও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১২ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পান জিনপিংয়ের বাবা। তাঁকে কমিউনিস্ট পার্টিতে পুনর্বাসন করা হয়। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হয়। এদিকে বাবার দৌলতেই দ্রুত উন্নতি হতে থাকে জিনপিংয়ের।

কীভাবে রাষ্ট্রনেতা হয়ে উঠলেন জিনপিং ?

রাজনৈতিক উত্থানের পিছনে বাবার ভূমিকা থাকলেও, রাষ্ট্রনেতা হিসাবে নিজের জায়গা তৈরি করার পিছনে রয়েছে জিনপিংয়ের বুদ্ধিমত্তা ও কূটনৈতিক চিন্তাধারাই। মাও জে দং নিয়ম তৈরি করেছিলেন যে চিনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে নয়, থাকবে কমিউনিস্ট পার্টির কাছে। সেই নিয়ম এখনও মেনে চলা হয়। তবে জিনপিং ক্ষমতায় আসতেই প্রথমেই সামরিক বাহিনীর ভিতর থেকে তাঁর বিরোধীদের তাড়ান। বিরোধী কণ্ঠস্বর রোধ করতে সিদ্ধহস্ত জিনপিং।

শুধু বিরোধী শূন্য হলেই তো হবে না, পাশাপাশি নিজের অনুগত সেনাও থাকা প্রয়োজন, এ কথা অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলেন জিনপিং। সেই কারণেই দলের অন্দরে তিনি নিজের এক বিশাল অনুগত সেনা তৈরি করেন, যারা তার সমস্ত বক্তব্যেই সম্মতি জানাবেন। পলিটব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করেও, সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন তিনি। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে ৪৭ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে তদন্ত শুরু হয়েছিল, তা আসলে জিনপিংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে ফেলতেই শুরু করা হয়েছিল। চিনের সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া- কোথাও দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে একটি শব্দও ব্যবহার করা যায় না।